‘পরীমনির টাকার উৎস খোঁজা হচ্ছে’
১০ আগস্ট ২০২১ ২০:৫১ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২১ ০০:১৭
ঢাকা: সম্প্রতি চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল মৌ ও পিয়াসাসহ গ্রেফতার কয়েকজনের বিরুদ্ধে করা সাতটি মামলা তদন্ত করছে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এই মামলাগুলো তদন্তের শুরুতে আসামিদের প্রত্যেকের বাড়িতে নতুন করে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেখান থেকে মালামাল জব্দ করা হয়েছে। ওইসব মালামালের টাকার উৎস কোথায়, তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কে টাকা দিয়েছে, কোথা থেকে এসেছে তার তদন্ত হচ্ছে।
বুধবার (১০ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিইআইডি প্রধান।
সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পরীমনি, পিয়াসা ও মৌয়ের মামলার বিষয়ে আমরা বেশ কয়েকজনকে ডেকেছি। আরও কয়েকজনকে ডাকব। তবে মিডিয়াতে আগেই তাদের নাম নিশ্চিত না হয়ে প্রচার করা উচিত না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত সবার বাসায় অভিযান চালিয়েছি। আমরা তিনটি জিপ, একটি বিএমডব্লিউ, একটি মাজদা এবং একটি ফেরারি গাড়ি জব্দ করেছি। মোবাইল জব্দ করেছি। আমরা চেষ্টা করব নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সবগুলো মামলার তদন্ত শেষ করতে। তবে অনলাইন, পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়াতে এসবের সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম এসেছে। এরকম খণ্ডচিত্র এলে অনেকের সম্মানহানি হয়। আমরা তদন্ত করছি, আমাদের সময় দেন। আমরাই তদন্ত শেষে সব জানিয়ে দেব।’
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘আপনারা জানেন সম্প্রতি ঢাকার বেশকিছু জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে থেকে বেশ কিছু মালামাল জব্দসহ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত মোট ১৫টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে আটটি মামলা। এসব মামলায় মোট ১০ জন আসামি রয়েছেন, যার মধ্যে আট জন এখন আমাদের কাছে রয়েছে। দুই জন অন্য মামলায় রিমান্ড আছেন। তাদের রিমান্ড শেষে আমাদের কাছে নিয়ে আসব। এই আট মামলায় আসামিরা আমাদের কাছে রিমান্ডে ছিল, কিন্তু আরও জিজ্ঞাসাবাদ থাকায় তাদের আজ আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়।’
ব্যারিস্টার মাহবুব বলেন, ‘আমরা জব্দ হওয়া ডিভাইসগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা শুরু করেছি। যেসব লিকার (মদ) পাওয়া গেছে সেগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষা চলছে। যারা এতদিন রিমান্ডে ছিল তাদের আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বিভিন্ন রকম তথ্য আমরা পেয়েছি। আমরা আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মামলাগুলো শেষ করতে হবে।’
মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ ছাড়া পরীমনিসহ বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অভিযোগ আছে কি না?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘তদন্তের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা আছে, আমরা সেই বিষয়গুলো সামনে রেখেই এগোচ্ছি। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা বুঝতে পারব মামলা কোন দিকে যাবে। আমাদের তদন্ত একদম পরিষ্কারভাবে চলছে। আগে থেকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় মাথায় রেখে আমরা তদন্ত করিনি। যেহেতু আসামিদের কাছ থেকে নানারকম মালামাল জব্দ করা হয়েছে, সেগুলো কোথা থেকে এসেছে, কারা টাকা দিয়েছে এবং উৎস কোথায় তা আমরা খুঁজে দেখছি।’
আরও পড়ুন:
- পরীমনি ৪ দিনের রিমান্ডে
- র্যাবের হাতে আটক পরীমনি
- পরীমনির বাসায় র্যাবের অভিযান চলছে
- পরীমনি ও রাজের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা
- পরীমনি আটক, নেওয়া হলো র্যাব সদর দফতরে
- এবার পরীমনি ও রাজকে রিমান্ডে পেল সিআইডি
- আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে: পরীমনি
- পরীমনির বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট’ অভিযোগ রয়েছে— র্যাব
- পরীমনিকে দেখতে এসে আদালতে যা বললেন শতবর্ষী নানা
- শুধু মদ নয়, পরীমনির বাসায় মিলেছে আরও ভয়ংকর মাদক
- এবার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসায় অভিযানে র্যাব
আসামিদের সম্পত্তির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করেছি। এ সংক্রান্ত নানারকম তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
জব্দ হওয়া গাড়িগুলো কার কার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে ছয়টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে সেগুলো কার কার নামে আছে, তার তথ্য জানতে আমরা বিআরটিএ-তে যোগাযোগ করেছি। এছাড়া গাড়িগুলো কোথা থেকে এসেছে এবং দেশে এগুলো সঠিকভাবে আনা হয়েছে কি না তাও আমরা তদন্ত করে দেখছি। পরীমনির বাসা থেকে আমরা একটি গাড়ি জব্দ করেছি।’
আদালতে পরীমণির আইনজীবী বলেছেন পরীমনি ১২২ ঘণ্টা ধরে একই পোশাকে আছেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সিআইডির প্রধানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আসামি পক্ষের আইনজীবীর কথা। ডিফেন্স অনেক কথা বলতে পারে। আমরা এ বিষয়ে আমাদের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি আসামিপক্ষের আইনজীবীর কথা সত্য নয়।’
কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অভিযোগ করছেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অভিযানকে কেন্দ্র করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাই তারা এ বিষয়ে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের কাছে অভিযোগ করেছেন। এতে করে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে কি না?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মনে করে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা যদি তদন্তের স্বার্থে কাউকে না ডাকি তাহলে আপনি মনে করবেন এই মুহূর্তে আপনি ওয়ান্টেড নন। যদি আপনাকে আমাদের প্রয়োজন হয় এবং আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে আমরা আপনাকে ডাকব। কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে ডাকে, তাহলে আমাদের কাছে এসে বললে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।’
এখন পর্যন্ত কতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাব। কারণ, আমাদের তদন্ত এখনও চলছে। এছাড়া প্রয়োজনে আমরা অনেককে ডাকতে পারি।’
এই মামলা সংক্রান্ত কারো বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আছে কি না?- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন পড়লে বিদেশযাত্রার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি। অফিসিয়ালি কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তবে কয়েকজনকে এ বিষয়ে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়া এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
আসামিদের হাতে প্রতারিত হওয়াদের কোনো ধরনের তালিকা তৈরি হচ্ছে কি না? সে বিষয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তালিকা তৈরি করার সুযোগ নেই।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম