সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, শঙ্কায় আমদানিকারকরা
৯ আগস্ট ২০২১ ১৩:৫০ | আপডেট: ৯ আগস্ট ২০২১ ১৪:০১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক উপায়ে কার্যকরী কমিটি নির্বাচনের ৯ মাস পরই দেখা দেয় নানা জটিলতা। রাজনৈতিক প্রভাব ও সিঅ্যান্ডএফ সদস্যের বিরোধে বর্তমানে দু’টি কমিটি নিজেদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটি বলে দাবি করছেন। নতুন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে আরেকটি নতুন কমিটি শপথ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে আমদানি-রফতানিকারকদের মনে। তারা বলছেন, দীর্ঘ এক যুগ পর নির্বাচন হওয়ায় স্বস্তি ছিল তাদের মনে। এতে আমদানি-রফতানিও বেড়েছিল। তবে ফের আগের মতো অগণতান্ত্রিক উপায়ে কোনো কার্যকরী কমিটি থাকলে ব্যবসায় নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে রাজস্ব আদায় কমে যাবে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে।
স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে সভাও করেছেন। সেখানে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আদায় অব্যাহত রাখতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু তাতেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এই মুহূর্তে দুই পক্ষই নিজেদের কার্যকরী কমিটি দাবি করায় সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
নির্বাচনে জয়লাভ করে গত ৯ মাস দায়িত্ব পালন করা কার্যকরী কমিটির দাবি, গণতান্ত্রিক উপায়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর সিঅ্যান্ডএফ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু হঠাৎ করে একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় কিছু লোক নিজেদের নতুন কমিটি বলে দাবি করছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) নতুন শপথ নেওয়া কমিটির দাবি, নির্বাচন হলেও তা নিয়মনীতি ও আইন অনুসরণ করে হয়নি। ফলে তারা অবৈধ। শ্রম অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেই কমিটি বিলুপ্ত করে আমাদের নির্বাচন আয়োজন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আমদানিকারক বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কোন্দলের ফল এটি। আমাদের দেশের আমদানিকারকরা বিভিন্নভাবে ভারতীয় রফতানিকারকদের কাছে হয়রানির শিকার হয়। যেমন বছরখানেক আগেও ভারত থেকে পাথরের ট্রাকে মাটি পাঠানোহ তো। বাধ্য হয়েই সেগুলো আমাদের নিতে হতো। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটি দক্ষ ও পেশাদার হওয়ায় এর প্রতিবাদ করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করতে সক্ষম হয়। এই বিষয়টিই অনেকে সহ্য হচ্ছে না, যে কারণে নতুন কমিটির নামে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে।’
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থলবন্দরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজস্ব আদায়ে ভূমিকা রাখে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি। দীর্ঘদিন থেকে কমিটি না থাকায় না বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল বন্দরে। ফলে অনেক আমদানিকারক এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এক যুগ পর নির্বাচনে কিছুটা স্বস্তি পায় আমদানিকারকরা। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার পরেও দু’টি পক্ষ নিজেদের কমিটি বলে দাবি করছে। ফলে আবারও নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে আমদানিকারকদের মনে।’
সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কার্যকরী কমিটির সভাপতি দাবি করা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘২০৭ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৯৬ জন সদস্য নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচন হয়। এনমকি নির্বাচনে কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় শ্রম অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দফতর নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম পর্যালোচনা করে সেই কমিটি বাতিল করে। এছাড়া শ্রম দফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করে সাধারণ সভা ও নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হয়।’ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সাধারণ সভার আয়োজন করে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, গণমাধ্যমকর্মীরা গতবছরের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। এমনকি পরেরদিন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সংবাদ প্রচার করে। নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থলবন্দরের আমরা উন্নয়নে কাজ শুরু করি। ফলে গত ২৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয় গত অর্থবছরে। একটি কুচক্রী মহল স্থলবন্দরকে অশান্ত করতে লাইসেন্সবিহীন সদস্যরা এমন পাঁয়তারা করছে।’
সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মমিনুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সরকারের নানামুখী আধুনিক যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও আমদানি-রফতানিকারকদের সহযোগিতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭০৭ কোটি ৮০ লাখ ৬ হাজার টাকা। করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির মধ্যেও যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি। এই অর্জনে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যোগদানের পর শুনেছি দীর্ঘ ১২ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু গত মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) বিকেলে আমার অফিসে আরেকটি পক্ষ নিজেদের কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে আসে। সিঅ্যান্ডএফের কমিটি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের করণীয় কিছু নেই। তবে এমন পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানির কারনে রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচলনা কমিটির সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের নির্বাচন ও কমিটি গঠন হবে। এতে আমাদের করণীয় কিছু নেই।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আদায় ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে করণীয় সবকিছু করা হবে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না। বন্দরসংশ্লিষ্ট ও উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭০৭ কোটি ৮০ লাখ ৬ হাজার টাকা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতির মধ্যেও যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি। বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় বর্তমান অর্থবছরে ৪৮৮ কোটি ৮৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা রাজস্ব বেশি আয় হয়েছে।
সারাবাংলা/এমও
চাঁপাইনবাবগঞ্জ টপ নিউজ দ্বন্দ্ব সোনামসজিদ স্থলবন্দর স্থলবন্দর