গ্যাং ছেড়ে জাতি গঠনে কাজ করবে ১৬ হাজার কিশোর
৮ আগস্ট ২০২১ ২০:৩৩ | আপডেট: ৮ আগস্ট ২০২১ ২৩:৩৪
ঢাকা: ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ একটি কিশোর গ্যাংয়ের ১৬ হাজার সদস্যকে জাতি গঠনে বিভিন্ন কাজে লাগাতে চায় পুলিশ। এখন থেকে ওই ১৬ হাজার সদস্য কোনো গ্যাংয়ের জন্য কাজ করবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। তাদের জাতি গঠনে ভালো কাজের তদারককারী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পাশে থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
রোববার (৮ আগস্ট) বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, একজন সচেতন নাগরিক অনলাইনে সক্রিয় একটি ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস উইংকে অবগত করেন। গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের নাম পরিচয়ও উল্লেখ করেন তিনি। উল্লিখিত কিশোর গ্যাংয়ের ফেইসবুক গ্রুপটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। সম্প্রতি ঢাকার একটি রেস্তোঁরায় তারা সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে গ্রুপের শতাধিক সদস্য ছেলে মেয়ে রাস্তায় নেমে যানচলাচল বন্ধ করে তাদের গ্রুপের নামে শ্লোগান দিতে দিতে এগোতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তারা সেখান থেকে সরে পড়ে।
তথ্যদাতার কাছ থেকে বার্তাটি গ্রহণ করে রমনা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসললমের কাছে পাঠালে প্রাথমিক যাচাই শেষে তিনি জানান গ্রুপটি তার এলাকায় সক্রিয় নয়। এরপর এ বিষয়টি খিলগাঁও থানার ওসি মো. ফারুকুল আলমকে পাঠালে তিনিও খোঁজখবর নিয়ে জানান গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন এডমিন তার থানার বর্ডারের কাছাকাছি রামপুরা থানা এলাকায় থাকে। পরে এ বিষয়টি রামপুরা থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকিরকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস উইং। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট রামপুরা থানার ওসি বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই গ্রুপটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত দুই জনকে আটক করে। আটক দুজনই অপ্রাপ্তবয়ষ্ক কিশোর। গ্রুপ মেম্বারদের একটি বড় অংশই স্বচ্ছল পরিবারের বখে যাওয়া ছেলেমেয়ে।
গ্রুপটির বিপুল সংখ্যক সদস্য ও তাদের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস উইংয়ের পরামর্শে এটি বিলুপ্ত না করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জনকল্যাণ ও দেশগঠনমূলক কাজে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশে এটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এলাকার জনপ্রতিনিধি ও কিশোরদের অভিভাবকরা। রোববার কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে তাদের প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সন্তানদের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা পেইজটির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। জাতিগঠনমূলক ইতিবাচক কাজে পেইজটি ব্যবহারের উদ্দেশে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস উইং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিবে।
মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস উইংয়ের পরামর্শে পেইজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন থেকে দেশপ্রেম, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবেশ রক্ষা, নারী ও শিশুর অধিকারের প্রতি সম্মান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে। প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজেদের ইতিবাচকভাবে তৈরি করতে পারলে পেইজটির ব্যবস্থাপনায় পুরোদমে সম্পৃক্ত হতে পারবে কিশোররা। তবে বর্তমানে ইতিবাচক আইডিয়া তৈরি ও প্রচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কিশোরদের এমনভাবে সম্পৃক্ত করা যাবে যেন তাদের লেখাপড়ায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
উল্লেখ্য, সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধের তথ্যসহ থানায় কেউ অভিযোগ করতে আগ্রহী না হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে অভিভাবক ও এলাকার জনপ্রতিনিধির নিকট উক্ত কিশোরদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এসএসএ