নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ
২ আগস্ট ২০২১ ২৩:০৯ | আপডেট: ২ আগস্ট ২০২১ ২৩:১৫
ঢাকা: চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের তুলনায় কমেছে। সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে প্রবাসীরা ১৮৭ কোটি ১৫ মার্কিন লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি আগের চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন মাসে প্রবাসীরা দেশে ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। ফলে জুলাই মাসে গত জুন মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০২০ সালের জুলাই মাসের তুলনায় এই জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কম এসেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতি বছর ঈদের পরবর্তী মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে। এবারও তার ব্যতিক্রম হযনি। তবে ঈদ যেহেতু জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ হয়েছে, সে হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমাটা একেবারে স্বাভাবিক না। এটি চিন্তার বিষয়।
তিনি বলেন, এতদিন মূলত তিনটি কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছিল। প্রথমত, অনেক প্রবাসী বিদেশে চাকরি হারিয়েছেন কিংবা অনেকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছেন। ফলে তারা তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত, রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে। এ কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। তৃতীয়ত, করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ থেকে দেশে আসা লোকের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে এতদিন যারা হাতে হাতে টাকা পাঠাতেন, এখন তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। তবে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য কিছুটা চিন্তার বিষয় বলেও মনে করছি।
২০২০–২১ অর্থবছরের ১২ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ
সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রবাসীরা মোট ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এরপর আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। এরপর গত অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার এসেছে দেশে।
নতুন বছরের শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করে। চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার, মার্চে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ও এপ্রিলে ২০৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার দেশে পাঠান। এরপর মে মাসে ২১৭ কোটি ১১ লাখ ডলার ও অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসীরা ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এলো ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রাখছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো— সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর