সরকার একটা মিথ তৈরি করতে চায়: ফখরুল
৩০ জুলাই ২০২১ ২১:০৬ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১ ০০:১৫
ঢাকা: উন্নয়ন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সরকার একটা মিথ তৈরি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ‘ব্যক্তিখাত বিকাশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মুক্তবাজার অর্থনীতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার একটা মিথ তৈরি করতে চায়। মিথটা কি? সাউথ ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। ইটস এ টোটালি ভোক্স, একটা মিথ ছাড়া কিছু না। গোয়েবেলসিয় পদ্ধতিতে প্রচার-প্রচারণার মধ্যে দিয়ে সরকার একটা মিথ তৈরির চেষ্টা করছে।’
সরকার বাংলাদেশেকে ‘দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ’ করে ফেলেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টারকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার, শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানিলন্ডারিং এমন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, এখন সরকার নিজে বলছে যে, এটা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার, দুদক চেষ্টা করছে। দুর্ভাগ্য আমাদের, এই কয়েকদিন আগে দেখলাম দুদকের যিনি সাবেক চেয়ারম্যান তার নামেও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গোটা দেশে এখন দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সেই ১৯৭৫ সালে যে উদ্দেশ্য ছিল যে, বাংলাদেশকে একটা নতজানু দেশ হিসেবে পরিণত করবে, পরনির্ভরশীল অর্থনীতি হিসেবে তৈরি করবেম সেই উদ্দেশ্যে তারা (সরকার) এখনও কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে এদেশে প্রায় ৬ কোটি লোক দারিদ্র সীমার নিচে। আজকে করোনার যে আঘাত এসছে সেই আঘাত সহ্য করতে পারছে না বাংলাদেশ। আজকে আরও দুই কোটি লোক নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। একদিকে কিছু লোক লুটের মধ্য, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।’
জিয়াউর রহমানের অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে পশ্চিমাররা মনে করত যে, বাংলাদেশ ফেইল্ড স্টেট হয়ে যাবে। সেই খান থেকে জিয়াউর রহমান তুলে নিয়ে এসেছিলেন উপরে একটা পটেনশিয়াল ইকোনমির দেশ হিসেবে, একটা সম্ভাবনাময় জাতি নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তার মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা ছিল না, তার মধ্যে কোনো কূপমণ্ডকতা ছিল না। তিনি একজন আধুনিক মানুষ ছিলেন, আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর হয়ে গেলো। এই ৫০ বছরে এসে একটি দল জোর করে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের যে জাতি নির্মিত হচ্ছিল সেই জাতি নির্মাণের সমস্ত প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে এবং তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটা পরনির্ভরশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে চাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি, একটা পরিবার এবং একটা দলকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আজকে যেভাবে সমগ্র দেশকে গ্রাস করে ফেলা হচ্ছে; তখনও (১৯৭২-৭৫ সাল) ঠিক সেইভাবে গ্রাস করে ফেলা হয়েছিলো। মানুষজন চোখের সামনে দেখল যে, তারা সুপরিকল্পিতভাবে লুটপাটের মধ্য দিয়ে এদেশকে একটা ভাগাড়ে পরিণত করেছে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই সময়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামটা পরিবর্তন করে নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি নাম দেওয়া উচিত।’
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় উদযাপন কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরুউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান।
সারাবাংলা/এজেড/এমও