হঠাৎ কেন গ্যারেজে আগুন!
২৬ জুলাই ২০২১ ১৯:১১ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১ ২০:৪৮
ঢাকা: দুইদিনের ব্যবধানে মতিঝিল এলাকায় প্রায় পাশাপাশি দুটি গ্যারেজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারটি বাস, একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। যেখানে সবকিছু বন্ধ রয়েছে। এমনকি গ্যারেজও বন্ধ ছিল। এই বন্ধ গ্যারেজে হঠাৎ করে কীভাবে আগুন লাগল সেই তথ্যই জানতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
গত ২৪ জুলাই বিকেলে হঠাৎ করে কমলাপুর বিআরটিসির ডিপোতে আগুন লাগে। কিছু বুঝে ওঠার আগের দুটি বাস পুড়ে যায়। সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে সেখানে কয়েকশ বাস সারি করে রাখা ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় কয়েকশ বিআরটিসির বাস।
একদিন পর ২৫ জুলাই সকাল সোয়া ১১টার দিকে মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের পাশের একটি গ্যারেজে আগুন লাগে। গ্যারেজটিতে ঢাকা টু কক্সবাজার রুটের চলাচলকারী সিল্ক লাইন পরিবহনের দুটি বিলাসবহুল বাস পুড়ে যায়। একইসঙ্গে একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়।
দুটি ঘটনাতেই ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুটো আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (ঢাকা মেট্টো) দেবাশীষ বর্ধণ। তিনি সোমবার (২৬ জুলাই) সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাড়ি রাখার গ্যারেজে আগুন লাগাটা আশ্চার্য হয়েছি আমরাও। অনেক সময় চলন্ত গাড়িতে আগুন লাগতে পারে। কিন্তু গ্যারেজে আগুনের ঘটনা রেয়ার।’
ফায়ার সার্ভিস তদন্ত কাজ শুরু করেছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সংস্থাও আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করছে। বিআরটিসির ডিপোতে আগুন; এটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বিআরটিসির ডিপোতে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে কয়েকশ বাস সারিবদ্ধ করে রাখা ছিল। সারিবদ্ধ বন্ধ বাসে আগুন লাগার কোনো কারণ নেই। কেউ আগুন লাগিয়েছে এমন ধারণা নিয়েই তদন্ত কাজ করছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্র জানায়, বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন লাগার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এরপরেও বাসে আগুন লেগেছে। এর কারও অনুসন্ধানে আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে এবং বাস ডিপোতে থাকা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে এখন পর্যন্ত কেউ বাসে আগুন দিয়েছে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
বিআরটিসির বাসগুলো রাজধানীতে কন্ট্রাক্টে চলে থাকে। এ কারণে অনেক গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দেখতে পারেন না। গাবতলী বাস ডিপো এক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। কল্যাণপুর ডিপো আরেক গ্রুপ দেখাশোনা করে। গাজীপুরের জোয়ার সাহারা ডিপো অন্য আরেকটি গ্রুপ দেখাশোনা করে। আর কমলাপুরের এই ডিপোটি মতিঝিল এলাকার বিআরটিসির শ্রমিক লীগ দেখাশোনা করে। এখানেও সদস্যদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাবিভক্ত। কেন আগুন লাগার ঘটনা খুব শিগগিরই বেরিয়ে আসবে বলে জানায় সূত্রটি।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্য জানান, বিআরটিসি ডিপোতে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। তবে তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই তা প্রতিবেদন আকারে দেওয়া হবে। কারা করেছে কেন করেছে তাও জানা যাবে।
এদিকে সিল্কলাইন পরিবহনের দুটি বিলাসবহুল গাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মতিঝিল এলাকায় রাখা বিভিন্ন পরিবহনের গাড়ির মালিকরা। একেকটি বাসের দাম দুই থেকে তিন কোটি টাকা। এই বাস পুড়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হতে হয় একেকজনকে। আগুন লাগার পর থেকেই সবাই গ্যারেজগুলোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আগের চেয়ে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অপরিচিতি কাউকে গ্যারেজে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের পরিচালনাধীন এস আলম পরিবহনের গ্যারেজের নিরাপত্তারক্ষী কাজী আশরাফ আলী বলেন, ও‘পর থেকে বলা হয়েছে। মানুষ তো দুরের কথা কোনো কাকপক্ষীও যেন গেট দিয়ে গ্যারেজের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। কখন কোন বাস প্রবেশ করে সেই বাসের সঙ্গে কোনো হেলপার আর ড্রাইভার থাকে তাও লিখতে বলা হয়েছে।’
কেন এ সব করতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্যারেজগুলোতে নাকি আগুন লাগছে। মতিঝিল এলাকায় বাসের গ্যারেজে আগুন লাগায় আতঙ্কে সব গ্যারেজে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি বলছে, বাসের গ্যারেজে আগুন লাগার ঘটনা পরিকল্পিত হতে পারে। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে