বিধিনিষেধের ৪র্থ দিনে বেড়েছে রিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন
২৬ জুলাই ২০২১ ১৭:২৯ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১ ১৯:৩৯
ঢাকা: সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের চতুর্থদিনে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় বেড়েছে রিকশা চলাচল। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাও। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষ চলাচলের পরিমাণ আগের তিন দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি। কোথাও কোথাও বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মানুষের জটলা দেখা গেছে। এ অবস্থায় পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। এ সব চেকপোস্টে বিনা কারণে বের হওয়া ব্যক্তি ও যানবাহনকে ধরে জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি রাস্তায় সারাক্ষণ টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্য।
সোমবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, বায়তুল মুকাররম, আরামবাগ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ, দৈনিক বাংলা, পল্টন, কমলাপুর, শান্তিনগর শাহবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে এগারটায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দেখা গেছে বড় ধরনের যানজট। এ সময় সেখানে গিয়ে দেখা গেছে রমনা জোনের এডিসি হারুন আর রশীদ এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন। এই কারণে সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ চেকপোস্টে প্রতিটি ব্যক্তিগত গাড়ি বের করার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। এই সময় যারা বাইরে বের হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারছেন না কিংবা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এই সময় বেশ কয়েকজনকে বিনা কারণে বের হওয়ায় আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রমনা জোনের এডিসি হারুন আর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক মানুষ বিনা কারণে বেব হচ্ছেন, অনেকে ঘুরতে কিংবা আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে বের হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে বিনা কারণে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশী করছি এবং প্রতিটি মানুষের বের হওয়ার কারণ জানতে যাচ্ছি। এর মধ্যে যারা বিনা কারণে বের হচ্ছেন কিংবা গাড়ির কাগজপত্র নেই আমাদের তাদেরকে চিহ্নিত করে জরিমানা করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে আটক করছি। কোনো মানুষ বিনা কারণে বাইরে বের হতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ি তল্লাশীর কারণে এখানে কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়েছে।’
এছাড়াও নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে, রিকশায়, বাইকে করে অথবা ব্যক্তিগত যানবাহনে কিংবা পায়ে হেটে চলাচলকারী লোকজনকে রাস্তার বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
এদের মধ্যে যে সব লোকজন সুনির্দিষ্ট কারণে কিংবা দরকারে বের হয়েছেন তাদেরকে চলাচলে কোনো বাধা দিচ্ছেন না। অন্যদিকে যারা বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদেরকে মামলা দিচ্ছেন, জরিমানা করছেন কোন কোন গাড়িকে রেকার লাগাচ্ছেন। এ ছাড়াও বিধিনিষেধের মধ্যে অফিস, দোকানপাঠসহ বন্ধ থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করতে রয়েছে টহল পুলিশের ব্যবস্থা। বিধিনিষেধের মধ্যে যে সব খাবার হোটেল খোলা রয়েছে সেখানে যাতে কেউ বসে খেতে না পারে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে টহল পুলিশ।
এ ব্যাপারে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ এ এসআই ওয়াহিদুর ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকারি বিধি নিষেধ পালন করার জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কেউ বিনা কারণে বের হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে রাজধানীর শাহবাগে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক জামাল মিয়া, সকাল সাতটায় বাড্ডা থেকে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। এখন সকাল ১১ টা বাজে বাজে মাত্র ১৭০ টাকা আয় করেছি। অথচ রিকশার জমা ১০০ টাকা, কীভাবে চলব।’
তিনি বলেন, ‘আজকে অন্য দিনের তুলনায় রিকশার পরিমাণ বেশি কিন্তু যাত্রী সে তুলনায় বাড়ছে না। ফলে আয় রোজগার নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৭/৮ শত টাকা আয় হলে লকডাউনের কারণে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয করতেই কষ্ট হয়। এবার লাকডাউনে যাত্রী নেই, আবার পুলিশ চলাচল করতে বাধা দিচ্ছে।’
অনদিকে মগবাজারে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাফর আহমেদ বলেন, ‘বোন জামাই অসুস্থ তাই সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে আসছি ১৫০ টাকা দিয়ে। এখন ২০০ টাকার নিচে কোনো রিকশা যেতে রাজি হচ্ছে না। তাই চিন্তা করছি কীভাবে যাব?’
সারাবাংলা/জিএস/একে