মাস্কবিহীন দুই-চার জন ছাড়া সব সড়ক ফাঁকা
২৩ জুলাই ২০২১ ১৩:৪১ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ১৪:৩৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকার নির্দেশিত কঠোর বিধিনিষেধে রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, সেগুনবাগিচা ও কাকরাইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে গণপরিবহন একেবারেই নেই। রিকশা চলছে এখানে-ওখানে। অল্প কিছু মানুষ রয়েছে রাস্তায়। তাদের কেউ ওষুধ কিনতে, কেউ বাজার করতে বের হয়েছেন। কেউ কেউ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যে। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন, তাদের অনেকের মুখেই নেই মাস্ক।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থেকে সেগুনবাগিচা-কাকরাইল এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়, রিকশা চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক। রাস্তায় রয়েছেন অনেকেই। তবে জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধের মধ্যে যে পরিমাণ জনসাধারণকে বাইরে দেখা গেছে, সে তুলনায় এদিন উপস্থিতি অনেক কম।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেশিরভাগই বের হয়েছেন বাজার করতে। কেউ কেউ বাসে করে ঢাকা এসেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। এখন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। পুলিশের তৎপরতা খুব বেশি না থাকায় রাস্তায় বের হওয়া লোকজনদের অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে কথা হয় তিন তরুণের সঙ্গে। রাজশাহী থেকে এসেছেন। যাবেন নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায়। জানালেন, ভোরে সাভারে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে জানিয়েছে, বিধিনিষেধের কারণে আর বাস সামনে যাবে না। এরপর সাভার থেকে হেঁটে, রিকশায় চড়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এসেছেন। তিন জনে মিলে তিনশ টাকা ভাড়ায় একটি রিকশা ঠিক করেছিলেন সেখান থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। কিন্তু রিকশায় চড়তেই পুলিশ দু’জনকে নামিয়ে দিয়েছে।
এই তিন তরুণের মতো আরও কিছু মানুষকে দেখা গেল, যারা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় যাওয়ার জন্য এসেছেন। তবে বাস থেকে নামার পর পরিবহন না পেয়ে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচের ওই এলাকা ছাড়া বাকি এলাকা মোটামুটি ফাঁকা। ঈদের ছুটি শেষ হলেও এদিন শুক্রবার হওয়ায় তেমন কাউকে দেখা যায়নি রাস্তায়।
এদিকে, শুক্রবার সকালের দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত দেখা গেলেও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় তেমন কাউকে দেখা যায়নি। বাসগুলো টার্মিনালে সারি সারি করে রাখা হয়েছে। একটি পরিবহনের সহকারী কাইয়ুম বলেন, ভোর বেলায় গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে। ট্রিপ নিয়ে আসার পর সবাই গাড়ি পার্কিং করেছে। লোকজন নামানোর পর তারা চলে গেছেন। ভোরের দিকেই মানুষজনের চলাচল শেষ হয়ে গেছে। আগামী ১৪ দিন গাড়ি বন্ধ থাকবে।
এদিকে প্রথমবার কঠোর বিধিনিষেধের সময় সড়কে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশি চেকপোস্ট এবং অসংখ্য পুলিশ সদস্য ও একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখা গেলেও এবারের কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে এবারে নতুন করে যেটি দেখা গেল— অনেক এলাকাতেই সড়কে আড়াআড়িভাবে বাঁশ ফেলে রাস্তার যান চলাচল আটকে দেওয়া হয়েছে।
মতিঝিল ইত্তেফাক মোড়ে পুলিশের একটি চেকপোস্টে তৎপর দেখা গেল পুলিশকে। মতিঝিল এলাকার পেট্রোল ইনস্পেক্টর শহীদ মিয়ার নেতৃত্বে সেখানে বাইরে বের হওয়া নাগরিকদের আটকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। অকারণে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছেন— এমন দু’জনকেও মোটরসাইকেল আটকে রেখে জেরা করতে দেখা গেল। মোটরসাইকেলের চালকের মুখে যেমন মাস্ক ছিল না, তেমনি ছিল না হেলমেটও।
মতিঝিল এলাকা থেকে পল্টন, কাকরাইল ও সেগুনবাগিচার দিকে এসে দেখা গেল, সড়কে জনচলাচল খুব একটা নেই। একইসঙ্গে এই এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিও কম।
জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, শুক্রবার এমনিতেই লোকজন কম থাকে। তাই পুলিশের চেকপোস্ট আজ হয়তো একটু কম। তবে চেকপোস্ট যে একেবারেই নেই, তা নয়। সব জায়গাতেই পুলিশ সদস্যদের ডিউটি দেওয়া আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছেন। ট্রাফিক সার্জেন্টও রয়েছে পর্যাপ্তসংখ্যক। কাল (শনিবার) থেকেই পুলিশ চেকপোস্টসহ তৎপরতা আরও বেশি দেখা যাবে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর