গ্রাহকদের টাকার খোঁজ জানতে ইভ্যালিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি
১৯ জুলাই ২০২১ ২২:৩৯
ঢাকা: পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ কোথায় রেখেছে— তা জানতে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালিকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের বিজনেস কোন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিয়ে যাবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওই চিঠির জবাবের ওপরে নির্ভর করেই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
সোমবার (১৯ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিএ) সেল থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ইভ্যালি গ্রাহক ও মার্চেন্ট পর্যায় থেকে যে চারশ কোটি টাকা নিয়েছে তা কোথায় রাখা হয়েছে, সেটি জানাতে হবে। যদি অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করে থাকে, তাও জানাতে হবে।
ইভ্যালি তাদের গ্রাহকদের পণ্য কিভাবে দেবে, মার্চেন্টদের বকেয়া কোন উপায়ে পরিশোধ করবে, তাদের বর্তমান ব্যবসায়িক নীতি কী— চিঠিতে এসব বিষয়ও জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল সম্পর্কেও জানতে চেয়ে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থায় যাওয়া যাবে না, সেটিও ব্যাখ্যা করতে হবে।
আরও পড়ুন- ইভ্যালির কার্যক্রম ও হটলাইন নম্বর বন্ধ হয়নি
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখেছি যে ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্ট পর্যায়ে অর্থের একটা বড় ধরনের গরমিল রয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া, অন্যদিকে মার্চেন্টদের বকেয়া রাখা— দুই জায়গায়তেই তারা বাকি রেখেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে প্রতিষ্ঠানটির হাতে রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। অর্থের পরিমাণে এত বড় পার্থক্য কেন, টাকা হাতে না থাকলে তারা ভোক্তাদের পণ্য দেবে কীভাবে— এগুলো উদ্বেগের বিষয়। অনেকেই কিন্তু ভাবছেন যে ক্রেতারা প্রতারিত হতে পারেন। কারণ টাকাটা কোথায় আছে, তা জানা যাচ্ছে না।
কোনো কারণে ইভ্যালি গ্রাহকদের অর্থ বা পণ্য ফেরত দিতে না পারলে কী হবে?— এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, ডেসটিনি ও যুবকের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তেমন হতে পারে। তবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সরকার হুট করে কাউকে তার সবকিছু বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারে না। এর কিছু প্রক্রিয়া আছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে তার আগে তাকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আসলে আমরা জানি না ইভ্যালির টাকাটা কোথায় আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে কোনো সূত্র উল্লেখ করেনি। সুতরাং টাকা তাদের হাতে থাকতেও পারে। না থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে। আগে তারা চিঠির জবাব দিক।
ইভ্যালিকে বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা সরকারের নেই উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ইভ্যালি যদি অন্য খাত থেকে বা অন্য কোনো শক্তিশালী বিনিয়োগ টাকা এনেও গ্রাহকদের দিতে পারে, তারা যদি তাদের সক্ষমতা দেখাতে পারে তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। আমরা তাদের বন্ধ করার চিন্তা এই মুহূর্তে করিনি। কোনো প্রতিষ্ঠানকেই বন্ধ করার চিন্তা আমাদের নেই। তারা টিকে থাকতে পারলে ভালো। কিন্তু তাদের ব্যবসায়িক কৌশল বাস্তবসম্মত কি না, সেটি তো দেখতে হবে। তাদের কার্যক্রম কতটুকু সন্তোষজনক, সেটি কমিটি দেখবে।
এর আগে, গত ৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ইভ্যালির বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদফতরসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চাই ক্রেতা-ভোক্তা উভয়েই সুরক্ষিত থাকুক। সেজন্য আমরা ডিজিটাল নির্দেশিকা করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশের ই-কমার্স বাণিজ্য সুশৃঙ্খলভাবে চলতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর