Sunday 19 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১/১১’র সরকারের মামলাতেও ঘাবড়াইনি: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৭ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ১৮:৩৮

ঢাকা: ২০০৭ সালে ১/১১’র রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির আমলে আমার বিরুদ্ধে ছিল ১২টি মামলা। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলো আরও পাঁচটি মামলা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া মামলার পরও আমি সেখানে ঘাবড়াইনি। তখন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সষ্টি করা হয়েছিল যে, জীবনে বোধহয় কোনোদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। তবে নিজের ওপর আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, জনগণের ওপর আমার অগাধ আস্থা ছিল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠান-২০২১’- অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন এবং এপিএ প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার বাবা-মায়ের খুনিদের বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। আমার মতো যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছিলাম তাদেরও সেই অধিকারটুকু ছিল না। বিচার চাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ছয়টি বছর আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছে রিফিউজি হিসেবে। নিজেদের আত্মপরিচয়টাও দিতে পারিনি। আর যখন যে দেশে আশ্রয় নিয়েছি তাদের ইচ্ছামতোই আমাদের পরিচয় গোপন করে থাকতে হয়েছিল। কারণ তখন মিলিটারি ডিকটেটররা ক্ষমতায় ছিল, তারা আমাদেরকে দেশে আসতে দেয়নি, বাধা দিয়েছে। এমনকি আমার ছোটবোনের পাসপোর্টটা পর্যন্ত দেয়নি।’

বিজ্ঞাপন

‘১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের মাটিতে ফিরে আসি একরকম জোর করেই। জানি একদিকে আমার পিতার খুনিরা, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী ও খুনের আসামিরা; তারাই ক্ষমতায়। যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি। মুক্তিযোদ্ধা নামধারী হলেই যে তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে সেটি তো না। এমন বিরূপ পরিবেশে দেশে ফিরে আসি বলেন প্রধানমন্ত্রী।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ঘিরে। বাংলাদেশের মানুষকে ঘিরে। যে মানুষদের একবেলা খাবার জুটত না, পরনে ছিন্ন কাপড়। থাকার ঘর ছিল না। চিকিৎসা সেবা ছিল না। শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্যই তিনি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। সেই আদর্শ নিয়েই আমার পথচলা শুরু। সেভাবেই আমাদের সংগঠন কাজ করেছে। আমরাও প্রচেষ্টা চালিয়েছি। যখন সরকারে এসেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেবক হিসাবে কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীত্ব তো আমার জন্য অন্য কিছু না, এটি একটি সুযোগ। সুযোগটা হলো— মানুষের জন্য কাজ করা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করা এটিই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘অনেক ঘাত প্রতিঘাত চরাই-উৎরাই পেরিয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তখন থেকে আমাদের পরিকল্পনা আমরা কীভাবে দেশকে উন্নত করব। যে সময়গুলো হারিয়ে গেছে সেগুলো ফিরে পাব না। কিন্তু আগামীদিনের পথচলাকে সহজ করে নিয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার কাজ— সেখানেও অনেক বাধা এসেছে। এরপর আট বছর পর আবার আমরা সরকার গঠন করলাম। আমরা ধারাবাহিকভাবে একটানা সরকারে আছি। একটানা সরকারে আছি বলেই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অগ্রযাত্রায় আজকে একটি বাধা এলো। যেটি শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বব্যাপী এই বাধাটা। সেটি হচ্ছে— করোনাভাইরাস। এই করোনাভাইরাস আজকে সমগ্র বিশ্বকে সংকটের মুখে ফেলেছে। এ ধরনের সংকট অতীতে বোধহয় আর কখনো দেখা দেয়নি। কারণ প্রযক্তির এই যুগে কোথায় কি ঘটছে খুব দ্রুত জানা যাচ্ছে। এই মহামারিটা সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে।’

১/১১’র সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭ সালে আমাকে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রেফতার করে। ১৬ জুলাই আমি বন্দি হই। কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না। তখনও কোনো মামলা দিয়েছে কি না জানি না। কিন্তু পুলিশ-মিলিটারি সব মিলে আমাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। আমাকে একটা সাব-জেলে একা রাখা হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৬ তারিখে বন্দি করা হয়। ১৭ তারিখে আমাকে নোটিশ দেওয়া হয়, আমার সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে। অর্থ্যাৎ আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা। বিএনপির আমলে ছিল ১২টা মামলা। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলো আরও পাঁচটি মামলা। আমি সেখানে ঘাবড়াইনি বরং আমি কারাগারে বন্দি হওয়ার পর সেখানে যে সময়টা পেয়েছিলাম, তখন বসে বসে আমি কিছু নোট করেছিলাম। বাংলাদেশটাকে কীভাবে উন্নত করব এ রকম চিন্তা-ভাবনা নোট করেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সরকারে ছিলাম, তখন আমাদের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যেতে পারিনি। তাই পরবর্তী সরকারে এলে কী কী কাজ করব মোটামুটিভাবে একটি খসড়া তৈরি করতে শুরু করি। তখন কিন্তু এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সষ্টি করা হয়েছিল যে জীবনে বোধহয় আর কোনোদিন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, জনগণের প্রতি অগাধ আস্থা ছিল।’

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া, ২০০৯ সালে সরকার গঠন, উন্নয়ন পরিকল্পনা, তাৎক্ষণিক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গণভবনে নিজের‘ বন্দি জীবনযাপন’ নিয়ে আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে বলতে গেলে এক রকম বন্দি জীবন কাটাচ্ছি। আগে ছিলাম ছোট জেলখানায়, এখন আমি বড় জেলখানায়। করোনাভাইরাসের কারণে এখন তো গণভবন থেকে বের হতে পারি না। এটিও আমার জন্য বড় জেলখানা।’

আজকের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আপনাদের সামনে থাকতে পারলাম না, এটিই আমার খুব দুঃখ। আজকে মন্ত্রণালয়গুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হলো। সেখানে আমি নিজে সরাসরি থাকতে পারলাম না। পুরস্কার তুলে দিতে পারলাম না, সেই দুঃখটি রয়ে গেল।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর