মঠবাড়ীয়ার ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ, ভ্যাকসিন বরাদ্দ মাত্র ৪ হাজার
১৮ জুলাই ২০২১ ০৮:৩১ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ১০:০৩
ঢাকা: পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়া উপজেলার এগারোটা ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ঘরে ঘরে মানুষের করোনার উপসর্গ। সচেতনতার অভাবে সেখানকার মানুষ জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা নিয়ে হাটে-বাজারে ঘোরাফেরা করছে। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সামাজিক দূরত্ব না মেনেই লাইনে দাঁড়িয়ে ওষুধ সংগ্রহ করছে তারা। ফলে করোনাভাইরাস আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।
মঠবাড়ীয়া সদর উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার চিকিৎসার জন্য মাত্র ১০টি সিট ও একটি কেবিন রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে মাত্র ৩৬টি। এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট সবচেয়ে বেশি। একটি সিলিন্ডার দিয়ে একজন রোগীকে মাত্র ২ ঘণ্টা সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব। ফলে রোগীর চাপ বেড়ে গেলে তাদের অক্সিজেন দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
যদি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন করতে প্রায় কোটি টাকা খরচ হবে। সেজন্য মঠবাড়ীয়ার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মঠবাড়ীয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে আধুনিক মানের হাসপাতালে উত্তরণ ঘটাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মজনু খাঁ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মঠবাড়ীয়াতে দুবার এসেছেন। তিনি একবার তুষখালী থেকে রিকশায় চড়ে এসে মঠবাড়ীয়া ডাকবাংলোয় ওঠেন। ওই সময় মঠবাড়ীয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মতিউর রহমানের বাসায় গিয়েছিলেন। যতটুকু মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু তখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আলোচনায় স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কৃষির ওপর জোড় দিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলেই মঠবাড়ীয়ায় একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রস্তাব করেছিলেন তৎকালীন এমপি সওগাতুল আলম সগির। সেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়েছে; কিন্তু সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যেমন র্দুগন্ধ, তেমনি সবকিছুতে ভুতুরে অবস্থা। তাই আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মঠবাড়ীয়ার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে আধুনিক হাসপাতাল করার দাবি জানাচ্ছি।’
মঠবাড়ীয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতা সাবেক ফুটবলার বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মঠবাড়ীয়ায় তিনবার এসেছেন। ৭০ মালে দুবার এবং যুক্তফ্রন্টের সময় একবার। বঙ্গবন্ধু আমাদের বাসায়ই উঠেছিলেন। কারণ আমার বাবা ডা. মতিউর রহমান মঠবাড়ীয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু রাজনীতি নিয়ে খুবই অন্তরঙ্গভাবে আলোচনা করছিলেন। ওই সময় তিনি মঠবাড়ীয়ার উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করছিলেন। আজ করোনামহামরিতে মঠবাড়ীয়ায় উন্নত চিকিৎসা নেই, এটাই দুঃখ।
তিনি বলেন, ‘যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে পাচ্ছে তাতে মঠবাড়ীয়া প্রশাসনের উচিত মহামারি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। এ জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মোট ৯৯টি ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে জনসচেতনতামূলক প্রচার অভিযান কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
মঠবাড়ীয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সালাম আজাদী সারাবাংলাকে বলেন, “করোনা উপসর্গ নিয়ে আনেক মানুষই মারা যাচ্ছে। এর হিসাব কেউ রাখে না। করোনা রোগীর চিকিৎসা সহায়তায় স্থানীয় সংবাদকর্মী শাকিল বাবু ‘মেরাজুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে তা করোনা রোগীর বাড়িতে বিনা খরচে পৌঁছে দিচ্ছে। এই মানবিক কাজটি সে না করলে মঠবাড়ীয়ায় অনেক দুঃসংবাদ পাওয়া যেত।”
সালাম আজাদী আরও বলেন, ‘মঠবাড়ীয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বাস। এখানে ভ্যাকসিন এসেছে মাত্র চার হাজার। যা মাত্র দুই হাজার মানুষকে দেওয়া যাবে। এখানে করোনা ভ্যাকসিনেরও সংকট। এছাড়া জনগণও ভ্যাকসিন নিয়ে অতটা সচেতন নয়। ভ্যাকসিনের জন্য বলতে গেলে কেউই রেজিস্ট্রেশন করছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
এদিকে মঠবাড়ীয়া সদর, তুষখালী ধানিসাফা, বড় মাছুয়া, শাপলাজা মিরুখালীর এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত কতজন মারা গেছে সে হিসাব কেউ দিতে পারেনি। এই এলাকায় অনেকটা গোপনে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়ে থাকে।
মঠবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মঠবাড়ীয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে প্রত্যেক ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর-কাশির খবর পাচ্ছি। এসব ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড টেস্ট করতে ১০০ জন এলে ৫০ জনের মধ্যে করোনার উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন সচেতনতা বাড়ানো। পাশাপাশি করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রাখা এবং ভ্যাকসিন দেওয়া।
ডা. ফেরদৌস ইসলাম জানান, রোববার (১৮ জুলাই) এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক আছে। বৈঠকে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম