প্রাভায় পজিটিভ, আইইডিসিআরে নেগেটিভ সাবেক আইনমন্ত্রীর পরিবার
১৫ জুলাই ২০২১ ২৩:৩০ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২১ ০৯:৫৪
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা করানোর পরে ভুল রিপোর্ট পাওয়ায় অভিযোগ করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের পরিবার।
৭ জুলাই রাজধানীর প্রাভা হেলথে বেসরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষা করানোর পরে ‘পজিটিভ’ জানানো হয় তাদের। এরপরে বিদেশ ভ্রমণ বাতিল করা হলেও প্রাভা হেলথ কর্তৃপক্ষ আর নমুনা পরীক্ষা করাতে রাজি হয় নি বলে অভিযোগ সাবেক আইনমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের।
পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রে (আইইডিসিআর) নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া যায়। ভুল ফলাফল দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের পরিবার। অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাভা হেলথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের ছেলে মাহফুজ শফিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ মাসের ৯ তারিখ আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবেই আমাদের ফ্লাইটের টিকেট কাটা ছিল। যেহেতু দেশের বাইরে যেতে হলে নমুনা পরীক্ষা করাতে হয় ফ্লাইটে ওঠার নির্দিষ্ট সময় আগে তাই আমরা প্রাভা হেলথে নমুনা পরীক্ষা করাই। আমরা ৭ জুলাই প্রাভা হেলথে নমুনা জমা দেই।’
তিনি বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে নমুনা জমা দিয়ে আসার পরে প্রাভা হেলথ থেকে রাত ১২ টার দিকে আমার স্ত্রীকে জানানো হয় নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি। তখন কেনো যেন আমার সন্দেহ হয়। কারণ আমাদের কারোরই কোনো উপসর্গ ছিল না। রাত ১২টার দিকেই আলাদাভাবে দুইটি এসএমএসে জানানো হয় আমার দুই বাচ্চাও কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু কারো কোনো উপসর্গ নেই তাই ল্যাবের ফলাফল নিয়ে আমি কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। সেই সংশয় দূর করার জন্য যোগাযোগ করি প্রাভা হেলথে। তারা তখন আমাকে বলে, তাদের পিসিআর মেশিন অত্যাধুনিক এবং নতুন।’
একই সঙ্গে তাদের ল্যাবের মানও ভালো বলে তারা রিপোর্ট ভুল হতেই পারে না বলে জানায়।
মাহফুজ শফিক বলেন, ‘তিনজনেরই ফলাফল পজিটিভ কিন্তু কারোরই কোনো উপসর্গ নেই। আবার আমাদের ফ্লাইটের টিকেট কাটা ছিল। টিকেট বাতিল করা হলেও আমরা পজিটিভ ফলাফল জানার পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কারণ বাসায় আমার বাবা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বয়স ৮৫ বছর এবং আমার মা অধ্যাপক মাহফুজা খানমের বয়স ৭৬ বছর। যেহেতু তারা বয়ষ্ক তাই আতঙ্ক আরও বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘টেনশন দূর করার জন্য সেদিনই রাতে দেড়টার দিকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়ে আমার নমুনা দিয়ে আসি। কারণ আমি তো সবার সঙ্গেই আছি, থাকছি। সেইখানের নমুনা পরীক্ষায় আমার ফলাফল নেগেটিভ বলে জানতে পারি। একই বাসায় থাকা আমি নেগেটিভ কিন্তু আমার বাচ্চারা ও স্ত্রী পজিটিভ এটা ভেবে কেমন যেন সন্দেহ লাগছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রাভা হেলথকে আমার পরিবারের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে অভিযোগ করি। তারা আমার অভিযোগ শুনে পরবর্তীতে যোগাযোগ করবে বলে জানায়। আমি বারবার যোগাযোগ করে নমুনা পরীক্ষা আবার করার অনুরোধ জানালেও তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেইনি। নমুনা পরীক্ষা না করালেও তাদের কাছ থেকে আমার কাছে মেইল আসে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে।’
মাহফুজ শফিক বলেন, ‘৮ জুলাই আমরা আইইডিসিআরে ফোন করি। সেখান থেকে একটা টিম আমাদের বাড়ি এসে পরিবারের সকল সদস্যসহ মোট ২০ জনের নমুনা নিয়ে যায়। ৯ জুলাই রাত ১২টায় তারা ইমেইল করে জানায় আমাদের সবার রিপোর্ট নেগেটিভ। আমরা শুনে স্বস্তি পেলেও ভাবছিলাম প্রাভা হেলথের রিপোর্টের কথা।
তিনি বলেন, ‘প্রাভা হেলথে আমাদের রিপোর্ট যখনই পজিটিভ শুনি তখনই আমাদের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার ফ্লাইটের টিকেট বাতিল করা হয়। পুরো পরিবারে আমরা আসলে সেই সময় থেকেই আতঙ্কিত হয় পড়ি। কিন্তু প্রাভা হেলথের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিস্তারিত জানিয়ে অভিযোগ করেছি স্বাস্থ্য অধিদফতরে। ১০ জুলাই আমি এ অভিযোগ জানাই। তারা বলেছে খুব দ্রুতই তদন্ত করে ফলাফল জানানো হবে।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে প্রাভা হেলথের পরিচালক মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ও তদন্ত কমিটির সভাপতি ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে আমরা যাই পাবো তা মহাপরিচালক মহোদয়ের কাছে জমা দেবো। যেহেতু এটি এখন তদন্ত করা হচ্ছে তাই এখনই আর কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
সারাবাংলা/এসবি/একে