Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমির হোসেনের ‘কালো তুফান’ আর ‘আদুরে মানিক’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জুলাই ২০২১ ১৮:৪৪ | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ১৯:৫৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জন্মের ব্যবধান এক বছরের। কিন্তু ওজন আর উচ্চতায় দু’জনই যেন সমানে-সমান। চট্টগ্রাম নগরীতেই এক খামারে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য রাখা দুই ষাঁড় এখন নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। মালিক বলেছেন, জন্মের পর থেকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে দুটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন তিনি। ভালোবেসে বড়টির নাম দিয়েছেন ‘কালো তুফান’ আর ছোটটি ‘আদুরে মানিক’। মালিকের কাছে এই দুটি যেন তার দুই সন্তান, যার কণ্ঠ শুনলেই ষাঁড় দুটি শিশুসুলভ মমতায় ঘাড় এলিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার শাপলা আবাসিক এলাকার মসজিদের পাশে আমির হোসেনের খামার ‘সোফিয়া ডেইরি ফার্ম’। সেই ফার্মে গরু আছে ৭০টির মতো। এর মধ্যে ৫০টি গাভী। দিনে দুধ বিক্রি হয় সাড়ে ৩০০ কেজির মতো। মূলত দুধ বিক্রিই আমির হোসেনের মূল আয়ের খাত। পাশাপাশি কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য এই দুটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন বলে জানালেন ৪০ বছর ধরে গরুর খামারের ব্যবসায় নিয়োজিত আমির হোসেন।

ষাঁড় দুটি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের। সাড়ে পাঁচ বছর আগে খামারের এক গাভী থেকে জন্ম কালো তুফানের। এক বছর পর আরেক গাভী থেকে জন্ম আদুরে মানিকের। সারাবাংলাকে আমির হোসেন জানালেন, খামারের দেশি জাতের গাভীর সঙ্গে শংকরায়নের মাধ্যমে ৮০ শতাংশ হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ষাঁড় দু’টি জন্ম নিয়েছে। এই জাতের গরুর সাধারণত মাথা ছোট, ঘাড় লম্বা, শরীরের পিছনের অংশ যথেষ্ট ভারি আর সামনের দিক সরু লম্বাটে হয়।

আমির হোসেনের ষাঁড় দু’টির বৈশিষ্ট্যও একই। উচ্চতা ও ওজন বেশ। কালো তুফানের গায়ের রঙ পুরোপুরি কালো। সাড়ে নয় ফুট লম্বা, উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। ওজন প্রায় ১২০০ কেজি বা ৩০ মণ। আদুরে মানিকের ওজন প্রায় এক হাজার কেজি বা ২৫ মণ। উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট ও লম্বায় নয় ফুট। এর গায়ে কালোর ওপর সাদা দাগ আছে। তার দাবি, কালো তুফান চট্টগ্রামের খামারগুলোতে থাকা গরুর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়।

আমির হোসেন জানালেন, ষাঁড় দু’টিকে জন্মের পর থেকে কোনো ধরনের রাসায়নিক দেওয়া হয়নি। গমের ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙা, মসুর ডালের ভূষি, চনার ভূষি, সয়াবিনের খৈল- দানাদার খাবারের মধ্যে এই ছিল তাদের আহার। এর পাশাপাশি নেপিয়ার ঘাস ও খামারে চাষ করা ঘাস দেওয়া হয় তাদের। দিনে একটি ষাঁড়ের খাবার ও লালনপালন বাবদ অন্তত ৬০০ টাকা খরচ হয়।

বিজ্ঞাপন

আমির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৫৫ বছর। আমার সন্তানরা বড় হয়েছে। তাদের আমি যেভাবে লালনপালন করে বড় করেছি, ষাঁড় দুটিকেও আমি সেভাবেই বড় করেছি। ছেলেমেয়েকে যেভাবে আদর করি, খামারের গরুগুলোকেও আমি সেভাবেই আদর করি। গরম বেশি পড়লে ষাঁড়গুলোকে দিনে তিনবার গোসল দিই। ফ্যানের বাতাসে রাখি ২৪ ঘণ্টা। ব্রাশ দিয়ে দিনে অন্তত দু’বার বডি ম্যাসেজ করি। অবস্থা এমন হয়েছে যে, তারা আমার কণ্ঠ শুনলেই চিনতে পারে। আমি ঢুকলেই ঘাড়টা আমার কাছে নিয়ে আসে, যেন আমি একটু ম্যাসেজ করে দিই।’

কালো তুফান আর আদুরে মানিককে বিক্রির পর ‘মন খারাপ’ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিক্রির পর কেন, এখন থেকেই তো আমার খারাপ লাগছে। সেজন্য আগের চেয়ে বেশি খামারে আসি এখন। তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াই, আদর করি। মন খারাপ হলেও কী করব, বিক্রি তো করতে হবে। রাখার তো সাধ্য নেই। নেক্সট জেনারেশন উঠে আসবে।’

আমির হোসেন কালো ‍তুফানের দাম নির্ধারণ করেছেন ১২ লাখ টাকা আর আদুরে মানিকের ৮ লাখ টাকা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে হাটে নিয়ে গরু বিক্রি করতে ইচ্ছুক নন। সেজন্য ফেসবুক-ইউটিউবে নিজের সন্তান আর কর্মচারীদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। এতেই প্রতিদিন অনেকে খামারে যাচ্ছেন গরু দু’টি দেখতে।

‘অনেকে ইউটিউবে দেখে আসছেন। গরু দেখে যাচ্ছেন। তবে দরদাম এখনও তেমন কেউ করছেন না। কোরবানির দুয়েকদিন আগে আরও বেশি কাস্টমার আসবেন। তখন সুবিধা অনুযায়ী বিক্রি করব’— বলেন আমির হোসেন।

সুবিধাজনক দামে গরু দু’টি বিক্রি করতে পারলে আয়ের একভাগ করোনায় অসহায় অবস্থায় পড়া গরীব-দুঃস্থদের মাঝে বিলিয়ে দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কালো তুফান আর আদুরে মানিক আমার অনেক আদরের। তাদের বিক্রির টাকার এক ভাগ আমি গরীব মানুষের জন্য খরচ করতে চাই।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আদুরে মানিক আমির হোসেন কালো তুফান গরু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর