‘সেদিন আম্মু আর আমাকে ডাক দিছে না’
১০ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৭ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ১৮:৪৮
ঢাকা: ‘প্রত্যেকদিন কাজে যাওয়ার সময় আম্মু ঘুম থেকে ডাক দিয়ে যায়। কিন্তু সেদিন আম্মু আর আমাকে ডাক দিছে না। আমাকে ভাত খাওয়ায়ে দিছে না। ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে দেখছি না। এখন পর্যন্ত আম্মুকে পাইছি না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিল সাত বছর বয়সী সুমা আক্তার। রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুড কারখানার যে ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে অর্ধ শতাধিক প্রাণ, সেই কারখানাতেই কাজ কাজ করতেন সুমার মা অমৃতা বেগম। অন্য সবার সঙ্গে তাই মরদেহের ভিড় থেকে মা’কে খুঁজেতে এসেছে শিশুটি।
শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে মায়ের খোঁজে খালা রোজিনা আক্তারকে নিয়ে মর্গে আসে। তিন দিন ধরে মাকে না পেয়ে তার চোখে-মুখে কেবলই বেদনা। যেন পৃথিবীর সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে সুমা। এতটুকু শিশুর কাছে মা-ই যে একটা পৃথিবী!
সুমার মা অমৃতা বেগম নারায়ণগঞ্জেরর রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ হন। ওই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলোকে চেনা যাচ্ছে না। সেজন্য ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করবে ঢামেক কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
- হাসেম ফুডস কারখানার তালাবদ্ধ ৪র্থ তলায় ৪৯ মরদেহ
- কারখানায় আগুন: ডিএনএ টেস্টের পর মরদেহ হস্তান্তর
- রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে আগুন, ২ শ্রমিকের মৃত্যু
- ১৬ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি হাসেম ফুডস কারখানার আগুন
- রূপগঞ্জে কারখানায় আগুন: সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ আটক ৮
- রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় আগুন, আরও এক শ্রমিকের মৃত্য
- রূপগঞ্জে কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর শোক
- কারখানায় আগুন: ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছে আ. লীগের প্রতিনিধি দল
- হাসেম ফুডসে আগুন: বিল্ডিং কোড মানা হয়নি, ছিল অতিরিক্ত কেমিক্যাল
সুমার খালা রোজিনা আক্তার জানান, তাদের বাসা গাউছিয়া গোলাকান্দাইল। কারখানার চার তলায় কাজ করতেন অমৃতা। তার স্বামী মো. সেলিম রিকশাচালক। রিকশা চালিয়ে মেয়েকে নিয়ে সংসারে চালাতে কষ্ট হয়। তাই গত মাসের ১ তারিখে হাসেম ফুড বেভারেজে চাকরি নেন অমৃতা। সেখানে এক মাসের বেতনও নিতে পারেননি। সুখের মুখ দেখার আগেই হারিয়ে গেল অমৃতা।
রোজিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুমাকে কিছুতেই বোঝানো যায় না। খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মতো করছে না। বাসায় গেলেই শুধু আম্মু আম্মু বলে কান্না করে। অমৃতার স্বামী সেলিমও নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে কারখানার গেটের সামনে বসে আছে। সুমাকে নিয়ে মর্গে এসেছি। তার মাকে পাওয়ার জন্য সুমা ডিএনএ’র নমুনার জন্য মুখের লালা দিয়েছে। আর আমি রক্ত দিয়েছি।’
এরকম অনেকেই স্বজনদের খোজে মর্গে ভিড় জমাচ্ছে। ছয় বছরের পাখি ও তের বছরের নাজমুলও মর্গে এসেছে তাদের মায়ের খোঁজে। সারাবাংলাকে নাজমুল জানায়, তার মা নাজমা বেগম (৩৪) কারখানার তিন তলায় কাজ করতো। তার বাবা কোনো কাজ করে না। সেজন্য নাজমুলও মায়ের সঙ্গে কারখানায় কাজ শুরু করে। নাজমুল দ্বিতীয় তলায় কাজ করতো। ঘটনার দিন মাকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজে বের হয় নাজমুল। তার পাঁচটার দিকে ছুটি হলেও তার মায়ের ওভারটাইমের কারণে রাত আট টায় বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কে জানতো তার মা আর বেরুতে পারবে না।
ছয় বছরের মেয়ে পাখি এখনও বুঝতে পারছে না যে, তার মা দুনিয়াতে আর নেই। মা তাকে সকালে কাজে যাওয়ার সময় সময় বলে গিয়েছিল, ঠিকমতো ভাত খেয়ো। দুষ্টুমি কোরো না।
ঢামেকের সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুশরাত ইয়াছমিন জানায়, দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৩৮টি মরদেহের জন্য ৫১ জন দাবিদারেরর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা চলমান থাকবে।
সারাবাংলা/এসএসআর/পিটিএম