আফগান পাইলটদের গুপ্তহত্যা করেছে তালেবান
১০ জুলাই ২০২১ ০১:৩০ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ১০:৫০
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর থেকে দেশটির বিভিন্ন জেলার দখল নিতে শুরু করেছে তালেবান বিদ্রোহীরা। আর তালেবান বিদ্রোহীদের হামলার মুখে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছে আফগান সেনারা। এমতাবস্তায় দেশটির বিমান বাহিনীর পাইলটদের গুপ্তহত্যা করছে তালেবান। খবর রয়টার্স।
তেমনই এক আফগান বিমান বাহিনীর মেজরের নাম দস্তগীর জামারি (৪১)। সম্প্রতি দেশটিতে দায়িত্বের বাহিরে থাকা বিমান বাহিনীর অফিসাদের গুপ্তহত্যার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে রাজধানী কাবুলের বাড়ি বিক্রি করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
এ বছরের শুরুর দিকে বাড়ির সম্ভব্য ক্রেতার সঙ্গে দেখা করতে রিয়েলস্টেট অফিসে যান দস্তগীর জামারি। ওই অফিসে গিয়ে একজন বন্দুকধারীর মুখমুখি হন তিনি। সেই বন্দুকধারী কোনো কথা না বলে সরাসরি গিয়ে ওই রিয়েলস্টেটের এজেন্টের মুখে গুলি করে দেয়।
এ সময় জামারির কাছে থাকা পিস্তলটি বের করার জন্য হাত দিতেই তার মাথায় গুলি করে দেয় ওই বন্দুকধারী। সঙ্গে থাকা ১৪ বছরের ছেলের কোলের উপরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই পাইলট। তবে সেই যাত্রায় ছেলেটি বেঁচে যায়।এ ঘটনার পর থেকে ছেলেটি আর খুব একটা কথা বলে না বলে জানিয়েছে নিহত পাইলটের পরিবার।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে জামারির শালক বলেন, ওই রিয়েলস্টেট এজেন্টকে দুলাভাই ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, জায়গাটিকে তিনি নিরাপদ ভেবে ছিলেন। তাই সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমরা জানতাম না যে, তিনি আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।
আফগান সরকারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মাসগুলোতে জামারিসহ অন্তত সাতজন পাইলট গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এ ধরনের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আফগান ও মার্কিন কমকর্তারা মনে করেন, দেশটির সামরিক বাহিনীর মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করার জন্য তালেবান এ ধরনের গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে— বিশেষ করে সেই সব পাইলট যারা মার্কিন বাহিনী ও ন্যাটোর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
বিমান বাহিনী না থাকায় মাঠের লড়াইয়ে অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে যুদ্ধে সমতা আনার জন্য তালেবান এমন চেষ্টা করছে। এদিকে মার্কিন সমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোর দখল করছে তালেবান বিদ্রোহীরা। এতে করে তারা দ্রুতই দেশটির রাজধানী কাবুল দখল করে নিতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নিহত দুইজন পাইলটের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তবে স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারার কারণে নিহত বাকি পাঁচজন পাইলটের পরিচয় জানা যায়নি বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পাইলট জামারিকে তালেবানের সদস্যরা গুপ্তহত্যা করেছে বলে রয়টার্সের কাছে স্বীকার করেছে সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। তিনি আরও বলেন, আফগান বিমান বাহিনীর পাইলটদের লক্ষ্যবস্তু করে তাদের হত্যা করার নতুন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কারণ তারা আমাদের লোকদের ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে তালবানের হামলায় ২২৯ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে। একই সময়ে আফগান বিমান বাহিনীর হামলায় ৪২ জন নাগরিক নিহত হয়।
তবে এসব টার্গেট গুপ্তহত্যাকাণ্ডের শিকার পাইলটদের কোনো তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি আফগানিস্তান সরকার। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। তবে পেন্টাগন জানিয়েছে, তালেবান দ্বারা আফগান পাইলট নিহত হওয়ার ঘটনা আমার অবগত। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
সারাবাংলা/এনএস