টানা ৭ দিন মৃত্যু ১০০-এর ওপরে, শনাক্ত ২০ শতাংশের বেশি
৩ জুলাই ২০২১ ২০:৪৯ | আপডেট: ৪ জুলাই ২০২১ ০৩:১১
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত এপ্রিলে বাড়লেও মে মাসে সেটা কিছুটা হলেও কমতির দিকে ছিল। তবে মধ্য জুন থেকে দেশের করোনা পরিস্থিতি ফের অবনতির দিকে রয়েছে। গত সাত দিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ও সংক্রমণের রেকর্ড দেখেছে দেশ। সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে দেশব্যাপী সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। তারপরও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে না। গত টানা সাত দিন ধরে দেশে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ করোনার সংক্রমণে মারা যাচ্ছেন। এই সময় শনাক্তের হারও রয়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। এছাড়া সাত দিনে ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ২৭ জুন থেকে টানা সাতদিন ধরে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি এবং মৃত্যু ১০০-এর ওপরে রয়েছে। ২৭ জুন ৫ হাজার ২৬৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ওইদিন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১১৯ জন। ২৮ জুন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ২৩ দশমিক ৮৫ শতাংশের শরীরের নমুনা শনাক্ত হয়। এদিন সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৩৬৪ জন। আর মারা যায় ১০৪ জন। ২৯ জুন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ শতাংশের ঘরেই থাকে। ওইদিন ৭ হাজার ৬৬৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। আর মৃত্যুবরণ করেন ১১২ জন।
৩০ জুন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। এদিনও ৮ হাজার ৮২২ জনের করোনা শনাক্ত হয় এবং মারা যান ১১৫ জন। এছাড়া ১ জুলাই ৮ হাজার ৩০১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আর মৃত্যু হয় এ পর্যন্ত রেকর্ড ১৪৩ জনের। এদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের ঘরেই ছিল। কিন্তু ২ জুন সেটা ২৮ শতাংশের ঘরে গিয়ে দাঁড়ায়। সেদিন ৮ হাজার ৪৮৩ জনের নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয় আর মৃত্যুবরণ করেন ১৩২ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ২১৪ জনের শরীরে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় এদিন শনাক্তের কিছুটা কমে ২৭ শতাংশে অবস্থান করছে। সর্বশেষ টানা সাত দিনে সারাদেশে ৫৩ হাজার ১১৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৮৫৯ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে, জনসমাগম এড়িয়ে না চললে এবং সঠিকভাবে মাস্ক না পরলে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এপ্রিলে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করলেও কিছু শিথিলতা ছিল বিধিনিষেধের মধ্যেও। খোলা ছিল দোকানপাট, চলেছে গণপরিবহন। তবে সরকার ঘোষিত সর্বশেষ নির্দেশনায় কঠোর বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। এবং সেই বিধিনিষেধ অনুযায়ী দেশের প্রায় সবকিছুই বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর পর বাংলাদেশেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণাতেও বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের কথা বলা হচ্ছে। তারা ঢাকায় করোনা সংক্রমিত ৬০ ব্যক্তির জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশের শরীরে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে দেশের খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আগের মতোই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, জনসমাগম না এড়াতে পারলে এবং মাস্ক না পরলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়।
সারাবাংলা/পিটিএম