সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে ১৪ মৃত্যু, অক্সিজেন সরবরাহে ত্রুটির অভিযোগ
১ জুলাই ২০২১ ১২:১৯ | আপডেট: ১ জুলাই ২০২১ ১৬:৪৩
সাতক্ষীরা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও সাতক্ষীরায় লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চার জন এবং এই ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসব রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কারণেই এসব রোগীকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সরবরাহে কিছুটা ত্রুটির তথ্য স্বীকার করে নিলেও অক্সিজেন সংকটের কথা অস্বীকার করছে। তবে অক্সিজেন সরবরাহে ত্রুটির ঘটনা তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কয়েকজন রোগীর স্বজনসহ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত অক্সিজেনের সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল না। ওই সময় বেশ কয়েকজন রোগী মারা যান বলে খবর পাওয়া যায়। রোগীর স্বজনরা বলছেন, অক্সিজেন সংকটের কারণে তাদের স্বজনদের মৃত্যু হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের আসাদুল্লাহ জানান, তার বড় ভাই রবিউল ইসলাম পারভেজ এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কলারোয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তাফা বলেন, আমার স্ত্রী হাসপাতালের সিসিইউয়ে ভর্তি আছেন। তার কোনো সমস্যা না হলেও ওই ওয়ার্ডে সন্ধ্যার দিকে দু’জন মারা গেছেন। অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, বুধবার সন্ধ্যায় করোনায় আক্রান্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন হাসপাতালের আইসিইউ এবং দু’জন সিসিইউ ইউনিটে ভর্তি ছিলেন।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বধায়ক ডা. কুদরাত-ই-খুদা সারাবাংলাকে বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছু সময় অক্সিজেনের চাপ কম ছিল। ফলে সরবরাহ কমে গিয়েছিল। তবে দ্রুতই অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডা. কুদরাত-ই-খুদা বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। কী কারণে অক্সিজেনের প্রেশার কমে গিয়েছিল, তা খতিয়ে দেখব। এরই মধ্যে আমরা এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ লাইনে ত্রুটি বিষয়ক এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদকে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন— সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মারুফ আহমেদ ও সামেক হাসপাতালের ডা. সাইফুল্লাহ। তাদের আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন ডা. শাফায়াত জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইনে কোনো সংকট থাকার কথা না। তাছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন বাদেও আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে ৭০টিরও বেশি সিলিন্ডার রয়েছে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহে কোনো জটিলতা তৈরি হলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনায় কারও কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির জানান, মেডিকেল তত্ত্বাধয়াককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সেটি পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭৪ জন। এছাড়াও করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এই জেলায় আরও কমপক্ষে ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সারাবাংলা/এএম