বাইরে বের হচ্ছে মানুষ, স্বাস্থ্যবিধি মানতেও অনীহা
১ জুলাই ২০২১ ১০:৫০ | আপডেট: ১ জুলাই ২০২১ ১৩:১৬
করোনা সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এদিন ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে নানান নিষেধাজ্ঞা ও প্রশাসনের মৌখিক সতর্কতা রয়েছে। রয়েছে জেল-জরিমানার হুমকিও।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সারাবাংলার করেসপন্ডেন্টরা জানিয়েছেন, সংখ্যায় কম হলেও ঘর থেকে বের হচ্ছেন নগরবাসী। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি দিনমজুরদেরও দা-কোদাল নিয়ে ফুটপাতে কাজের জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে। খোলা রয়েছে হোটেল-রেস্টুরেন্ট। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। তবে প্রশাসনের সর্বাত্মক তৎপরতা দেখা গেছে রাজধানীর পথে পথে। চেকপোস্ট বসিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছেন তারা।
রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুর ও রাজারবাগ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট গোলাম সামদানী জানান, মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করে রাস্তায় বের হওয়া লোকজন ও বিভিন্ন গাড়ি চেক করছেন। কারণ জানতে চাইলে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ লোকজনই অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। হোটেল রেস্টুরেন্ট খোলা রেখে ‘পার্সেল করা হয়’ ব্যানার ঝুলানো হয়েছে। তবে ভেতরে বসেই খাচ্ছেন ক্রেতারা। এই অভিযোগে রাজধানীর ফকিরাপুলের ডিআইটি রোডের হোটেল সৌখিন ও প্রিন্স রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে আটক করেছে মতিঝিল থানা পুলিশ।
মতিঝিল শাপলা চত্বরে চেকপোস্টের দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সার্জেন্ট এনাম সারাবাংলাকে বলেন, অনেক মানুষ বিনাকারণে বের হচ্ছেন। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।
মতিঝিল থানার এসআই শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, হোটেল বসে খাওয়ার নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সৌখিন ও প্রিন্স হোটেল তা মানছিল না। এই দুই হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করে মতিঝিল থানায় নেওয়া হয়েছে।
কদমতলী থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আরিফুল ইসলাম জানান, কেরানীগঞ্জ কদমতলী এলাকায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে। পায়ে হেঁটে ও রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা। অধিকাংশ মানুষ তাদের কর্মস্থালে যাওয়ার কথা বলে বের হচ্ছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখা গেছে, মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করতে। তবে অনেকেই পুলিশের কথা তোয়াক্কা না করে বের হচ্ছেন।
শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকা থেকে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট উজ্জল জিসান জানান, প্রথম দিনে প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকায় মানুষজন কম। তবে বিনাকারণে অনেকেই রাস্তায় বের হচ্ছেন। পুলিশ তাদের জেরার মুখে ফেলছে।
তিনি আরও জানান, যাত্রাবাড়ীতে একটি বড় পাইকারি বাজার থাকায় ওই এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই লোকজন একটু বেশি দেখা গেছে। তবে পায়ে হাঁটা লোকজনের সংখ্যাই বেশি চোখে পড়েছে। শনির আখড়া এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। প্রতি চেকপোস্টে ১০/১২ জন করে পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সঙ্গে একজন করে সার্জেন্টও রয়েছেন। একটা গাড়ি আসলেই তাকে আটকানো হচ্ছে এবং গাড়ির কাগজপত্র নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে মামলা।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম কাজল যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে অন্যান্যদের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। কেমন হচ্ছে লকডাউন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। একজন প্রেস লাগিয়ে মোটরসাইকেলে এসেছিল। ওনাকেও আমরা চেক করেছি। তার কোনো আইডি কার্ড পাইনি আমরা। এরপর তার গাড়িতে একটা মামলা দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি। মাস্ক পড়াটাকেও খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি।
ওসি আরও বলেন, যেহেতু যাত্রাবাড়ীতে একটা বড় বাজার রয়েছে তাই গতকালকেই বলা হয়েছে, রাতের মধ্যেই যেন বেশিরভাগ কেনাকাটা শেষ করা হয় এখানে। কোন ভিড় করা চলবে না।
আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর ও তালতলা এলাকাঘুরে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জোসনা জামান জানান, এই এলাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রিকশা, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলের চাপ বাড়তে দেখা গেছে। চোখে পড়ার মতো প্রাইভেটকারও চলছে। প্রধান সড়কের কোথাও পুলিশের চেকপোস্ট নেই। তবে অলিগলিতে টহল পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়েছে।
নিউমার্কেট থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তুহিন সাইফুল জানান, ভোর থেকে এই এলাকায় পুলিশি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। চেকপোস্টগুলো ২০ থেকে ৩০ জন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলেই তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে মানুষজনের চলাচল খুব একটা দেখা যায়নি রাজধানীর ব্যস্ততম এই এলাকায়।
ধানমন্ডি-জিগাতলা এলাকা থেকে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রয় জানান, জিগাতলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। একটি বিজিবি গেট থেকে একটু সামনে এগিয়ে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে। অন্যটি আবাহনী মাঠের সামনে। এসব চেকপোস্টে দায়িত্বপালন করছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য। প্রাইভেটকার ও রিকশা নিয়ে চেকপোস্টে আসা যাত্রীদের বেশিরভাগই তাদের বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
তিনি আরও জানান, মোড়ে মোড়ে রিকশাওয়ালারা দাঁড়িয়ে আছেন। ভাড়া তুলনামূলক বেশি হলেও অনেকেই প্রয়োজনীয়তার কারণে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়েই নিজের গন্তব্যের যাতায়াত করছেন।
রিকশাচালক সাইফুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, এবারের লকডাউনে রিকশা চালাতে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। সকাল সাতটায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। এ পর্যন্ত তিনটা খেপ মারতে পেরেছি।
সারাবাংলা/এএম