Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিধিনিষেধ প্রতিপালনে কাউকে ছাড় দেবে না পুলিশ

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুন ২০২১ ২১:৫৫ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২১ ২২:০৩

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এই বিধিনিষেধের আওতায় সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন, মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে বের হতে না করা হয়েছে। সরকারের এই বিধিনিষেধ প্রতিপালনে বাংলাদেশ পুলিশ এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে এবার পুলিশ শুরু থেকেই কঠোর ভূমিকায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর আগের কয়েক দফা বিধিনিষেধে পুলিশ কঠোর না থাকলেও এবারে তার ব্যতিক্রম ঘটবে। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অমান্য করলে তার জন্য এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ২৬ মার্চ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল সাধারণ ছুটি। ওই সময় শুরু থেকেই ব্যাপক তৎপর ছিল পুলিশ। সেই সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ফের করোনা সংক্রমণ বাড়ছে সরকার দফায় দফায় নানা ধরনের বিধিনিষেধ দিয়েছে। কিন্তু এই বিধিনিষেধের সময়গুলোতে পুলিশকে আগের মতো সক্রিয় দেখা যায়নি মাঠে। তবে এবারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হতে যাওয়া লকডাউনে পুলিশ ফের পূর্ণ মাত্রায় কঠোর ভূমিকায় থাকবে বলেই জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩০ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিধিনিষেধ জারি করেছে। এই বিধিনিষেধ প্রতিপালনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃঞ্চপদ রায় সারাবাংলাকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার যে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে, তা কঠোরভাবেই প্রতিপালন করবে পুলিশ। বিনা কারণে কাউকে সড়কে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। কারণ ছাড়া বাইরে বের হলে ওই ব্যক্তিকে শাস্তি ও জরিমানার আওতায় আনা হবে। ঘুরতে বের হওয়াদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনকারীদের পুলিশ কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবে না। গত লকডাউন চলাকালে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তা হতে দেওয়া হবে না। এবার প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে পুলিশের কড়া চেকপোস্ট থাকবে। কারণ দর্শানো ছাড়া কেউ চেকপোস্ট পার হতে পারবে না। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে।

আরও পড়ুন-

পুলিশ সূত্র বলছে, সরকারি সিদ্ধান্তগুলো দ্বিমুখী হওয়ার কারণে পুলিশ মাঝখানের সময়গুলোতে দায়িত্ব পালনে তেমন কঠোর হতে পারেনি। সরকারের পক্ষ থেকেও পুলিশকে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে এবারে নতুন করে নির্দেশনা আসায় পুলিশ সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে।

এর মধ্যে বুধবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) সব ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে একই কথা জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামও। তিনি বলেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হবে। দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী নিয়মিত মামলা করা হবে। তাকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা এই বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবেন। তারা যেকোনো গাড়ি ব্যবহার করে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আর কাঁচাবাজারে যেহেতু ভিড় বেশি হয়, তাই সব কাঁচাবাজার রাস্তায় আনা হবে, যেন সবাই দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করতে পারেন।

ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ মাঠে কঠোর থাকলেও কেউ যেন অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে সজাগ থাকবে ডিএমপি কমিশনারের আইএডি বিভাগ। এছাড়া গণমাধ্যমের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোও আমলে নেওয়া হবে।

মাঠ পর্যায়ে পুলিশের প্রস্তুতি কেমন— জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর ছিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশের ওপর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেকপোস্ট বসাতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসবে। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মামলা করা হবে। পুলিশ কঠোর থাকবে।

গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজু মিয়া বলেন, অলিগলি সব জায়গায় দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এরপরও দোকান খোলা রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তো বের হওয়াই যাবে না। আবার কেউ জরুরি প্রয়োজনে বের হলে যদি তার মাস্ক না থাকে, তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। আবাসিক এলাকাগুলোতে বলে দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন ঘরের বাইরে বের না হয়। পুলিশ কিন্তু কাউকে বিশ্বাস করবে না।

এদিকে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন ও প্রশিক্ষণ) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সারাদেশে জেলা প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবেন। বিজিবি সদস্যরা জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে তারা কাজ করবেন।

এদিকে, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কথাও বলা হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য মাঠে থাকবে সেনাবাহিনীও। তবে তারা কোথায় কিভাবে মোতায়েন থাকবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

কঠোর বিধিনিষেধ পুলিশের ভূমিকা বিধিনিষেধ প্রতিপালন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর