শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবান্তর: দীপু মনি
৩০ জুন ২০২১ ১৭:৫৪ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২১ ১৯:৩৩
ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময়কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবান্তর। তবে শিগগিরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশি-আন্তর্জাতিক নানা ধরনের জরিপ বলছে ৪৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান গ্রহণ করতে পারছে। সর্বনিম্নটা ধরে নিয়ে আমরা এই হার বাড়াতে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে গেছি। এতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাভাবিক পাঠক্রমে এর চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে না। ফল অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে আমরা স্বাভাবিক সময়ের মতো পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছি।’
বুধবার (৩০ জুন) সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
এর আগে, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবেরও পর তাদের বক্তব্য দেন। এ সময় কোনো কোনো সংসদ সদস্য স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি করেন। অবশ্য কেউ কেউ এর বিরোধিতাও করেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেছিল। তারা খোলার পরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরে আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে শ্রেণি সাইজ ২০/২৫ জনের বেশি নয়। আমাদের এখানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গায়ে গায়ে লেগে বসে থাকে। সেখানে খোলার প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের কেউ কেউ খুলে দেওয়ার কথা বললেও এ সময় খোলা হলে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না বলে একবাক্যে জবাব দেন। তারা বলেন সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য পাঠাতে পারি না। তাদের বিভিন্নভাবে এক্সপ্রেশন প্রকাশ করেন।’
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বছরে এ ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশ এমন কী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। কোনো কোনো দেশ প্রেডিকটেড গ্রেড দিচ্ছে। আমরা সেখানে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফেলেছিলাম। এইচএসএস পরীক্ষা শুরুর দিক দুই/তিনদিন আগে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে আমরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার ফলাফল দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে বিচার বিশ্লেষণ ও টালি করে ফলাফল দিয়েছি দুই একটি ব্যক্তিক্রম ছাড়া পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এরকমই হতো। কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা খুব শিগগিরই জানাব। কী পদ্ধতি আমরা করবো সবকিছুই আমরা জানাব। তবে, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাইকে বলব উদ্বিগ্ন হবেন না। বৈশ্বিক সংকট চলছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকল ক্ষেত্রে সেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হবে। এটি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। অবশ্যই আমরা প্রজ্ঞা, জ্ঞানের সব কিছু প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সারাবিশ্বেই ব্যত্যয় ঘটেছে। আমাদের এখানেও কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তাদের যাতে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো ক্ষতি না হয়ে যায় তার জন্য সর্বোচ্চ নজর রাখছি। আমরা কেভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।’
বিকল্প সময়ে সরকার দ্রুত সময় পাঠদান শুরু করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সক্ষম হয়েছি, বিশ্বের আর কোথাও এত দ্রুত শুরু করেনি। যে কারণে বিশ্বে শিক্ষা নিয়ে কোনো সভা হলে বাংলাদেশের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়টির প্রশংসা করা হয়।’
সংসদ টেলিভিশন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সকলের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় সন্তুষ্টি রয়েছে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সকলেই এই পদ্ধতিতে ভালো বলে গ্রহণ করেছেন। বিশেষজ্ঞরাও এটির পক্ষে মত দিয়েছেন। আমরা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে বিকল্প যে কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করছি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বলা হয় শিশুদের ইমিউনিটি অনেক বেশি। শিশুরা কম সংক্রমনিত হচ্ছে এটি যেমন বলা হচ্ছে আবার বিজ্ঞান বলছে শিশুদের মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। তারা নিজেরা হয়ত আক্রান্ত হলে তাদের সিমটম হয়ত থাকবে না কিন্তু বাড়িয়ে গিয়ে তাদের বাবা-মাসহ অন্যদের সংক্রমন হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। সেটিকে বিবেচনায় থাকতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় অনন্ত একজন করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। তার মাধ্যমে মাঠপ্রশাসনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে