আরও ২ লাখ ২২ হাজার খামারি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার
২৭ জুন ২০২১ ১১:০২ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ১৩:৪৮
ঢাকা: বছর জুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় সাত লাখ খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সব খামারির সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। সে ধারাবাহিকতায় এবার আরও ২ লাখ ২২ হাজার খামারিকে ২৮৬ কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে সরকার। রোববার (২৭ জুন) খামারিদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে প্রণোদনা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ক্ষতি কাটিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি খামার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
সুত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪ জন খামারিকে মোট প্রায় ৮৪৬ কোটি কোটি টাকার নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে, ডেইরি ও পোল্ট্রি খাতে ১৫টি ক্যাটাগরিতে ৬ লাখ ২০ হাজার খামারির জন্য প্রায় ৭৪৬ কোটি টাকা এবং মৎস্য খাতের ৭৮ হাজার ৭৪ জন খামারির সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন হারে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত ২ লাখ ২১ হাজার ৯৯৩ জন খামারিকে ২৮৬ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার সহায়তা দেওয়া হবে। এরমধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে ২ লাখ ১৮ হাজার ১৪৮ জন খামারিকে ২৮১ কোটি ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং মৎস্য খাতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন খামারিকে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা দেওয়া হবে। রবিবার (২৭ জুন) খামারিদের মোবাইল ব্যাংক একাউন্টে এ প্রণোদনার টাকা বিতরণ করা হবে।
এর আগে প্রথম পর্যায়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ জন খামারিকে ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ৪ লাখ ১ হাজার ৮৫২ জন খামারিকে ৪৬২ কোটি ৩৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়। মৎস্য খাতে ৭৪ হাজার ২২৯ জন খামারিকে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেয় সরকার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ খামারীরা আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। এতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারা। যার ফলে করোনাকালীন সময়ে দুধ-ডিম-মাংসের পর্যাপ্ত যোগান সম্ভব হয় এবং এই দুঃসময়ে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। প্রণোদনা পাওয়ায় অনেক খামারি সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ধাপে খামারিদের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)-এর চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় লকডাউনের কারণে খামারিদের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের বিপনন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। এই দুই জায়গায় তারা মনোবল অনেকটা হারাতে বসে। এ অবস্থায় সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়। তাদের জন্য একদিকে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে তাদের ইনপুট সরবরাহ ব্যবস্থা অটুট রাখে। অন্যদিকে নগদ আর্থিক সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়। ফলে খামারিরা একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি তাদের মনোবল ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এতে উৎপাদন ব্যবস্থা অটুট রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ধাপে ৪ লক্ষাধিক খামারিকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে নতুন করে ৩ হাজার ৮৪৫ মৎস খামারিকে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে। করোনা সংকটে সরকার খামারিদের পাশে আছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে এত বড় প্রণোদনা অতীতে কখনই দেওয়া হয়নি। এটি এ খাতের জন্য নিঃসন্দেহে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, ‘রোববার ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেবে। এরআগে প্রথম ধাপেও খামারিদের প্রণোদনা দিয়েছি। দ্বিতীয় ধাপে যাচাই-বাছাই করে খামারিদের চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের এই প্রণোদনার টাকা দেওয়া হবে। এর ফলে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করছি।’
সারাবাংলা/জেআর/একে