ভাসানচর থেকে পালিয়ে এসে চট্টগ্রামে আটক ১৪ রোহিঙ্গা
২২ জুন ২০২১ ২৩:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নোয়াখালীর ভাসানচর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে আসা নারী ও শিশুসহ ১৪ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। এ নিয়ে গত তিন দিনে মীরসরাইয়ে ২৪ জন রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ জুন) দুপুরে মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ইছাখালীতে ইকোনমিক জোন এলাকায় সাগর সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুর হোসেন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটক ১৪ জনের মধ্যে চার জন পুরুষ, চার জন নারী ও ছয় জন শিশু। তারা চারটি পরিবারের সদস্য এবং পরিবারগুলো নিকটাত্মীয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, তারা নৌকায় করে ভাসানচর থেকে সাগরপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা দেড়টা নাগাদ তারা মীরসরাই ইকোনমিক জোন সংলগ্ন এলাকায় তাদের নৌকা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় জনসাধারণ তাদের দেখে সন্দেহ হলে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেন’।
আটক মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছেন, মোহাম্মদ রফিক (২৫), জোহার (২৫), সাইমা (৬), হাসিনা(২৬), রমজান আলী (১২), কাশ্মীন আকতার (৯), সাত মাস বয়সী দেলোয়ার হোসেন, জেসমিন (৩), মো. রফিক (১৯), ছেনোয়ারা বেগম (১৮), রবি আলম (১৯), আজিদা (১৮), শওকত আরা (১৯) এবং মো. জোবায়ের (২)।
জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, মীরসরাই ইকোনমিক জোনের আনসার সদস্যরা রোহিঙ্গাদের দেখে প্রথমে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তাদের আটকে রাখে। পরে স্থানীয় চরশরৎ পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেয় তারা। পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
এর আগে, গত রোববার জোরারগঞ্জের ইছাখালী এলাকা থেকে ভাসানচর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা ১০ জন রোহিঙ্গা ও তাদের নিয়ে আসা তিন দালালকে আটক করে পুলিশ।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রবেশ শুরু করেন। সেসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। গত তিন দশকে আসা নতুন পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দিতে নৌবাহিনী নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে। সেখানে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, খেলার মাঠ, হাসপাতালসহ প্রায় এক লাখ মানুষের নিরাপদে থাকার সব ব্যবস্থা আছে বলে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
এ অবস্থায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হয়। কয়েক দফায় ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে গিয়েছিলেন। তবে এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে ভাসানচর থেকে ফের কক্সবাজারে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/আইই