ছোট ভাই হত্যায় বড় ভাইয়ের স্বীকারোক্তি আদায় দুঃখজনক: হাইকোর্ট
২১ জুন ২০২১ ১৬:৩৫
ঢাকা: বগুড়ায় আট বছরের বয়সী ছোট ভাই হত্যা মামলায় ১২ বছর বয়সী বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২১ জুন) শিশু সোহাগ হত্যা মামলার নথি তলব চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালত আগামী ২৯ জুন এই আবেদনের পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। আাদলত ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে শুনানিতে থাকতে বলেছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর কাটাখালী গ্রামের মহিদুল ইসলামের ৮ বছরের ছোট ছেলে হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ছেলের ‘জোর করে স্বীকারোক্তি’ নেওয়ার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ১১ জুন ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এই মামলায় শিশু আদালতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী আবেদন করেন।
এ বিষয়ে শুনানিতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘একজন বাবা তার এক সন্তানকে হারালেন, ওই সন্তান হত্যার অভিযোগে বড় ছেলে যার বয়স ১২ বছর, সে হয় আসামি। উল্টো বাড়িঘরও ছাড়তে হয়েছে সন্তানের বাবা-মাকে। এটি একটি অমানবিক ঘটনা।’
শিশির মনির বলেন, ‘১২ বছরের একটি শিশুকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে নেওয়া হলো। শিশু আদালতের সামনে আসলো অথচ আইন থাকার পরও কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণে বিষয়টি দেখভালের জন্য আমরা আপনাদের কাছে এসেছি। যাতে ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়ে সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হয়।’
শুনানিতে আদালত বলেন, ‘এটি তো দুঃখজনক। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং এটি যদি সত্য হয়, তাহলে সেটি আমাদের দেশের জন্য দুঃখজনক। আমরা এখনও জানি না কী ঘটেছে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য বলেন আদালত।’
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন তার বাবা মহিদুল। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হঠাৎ করেই স্থানীয় থানার একদল পুলিশ তার বাড়িতে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে ১২ বছরের বড় ছেলেকে নিয়ে যায় তারা। ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে থানায় যাই। কিন্তু মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আমাকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেননি’, অভিযোগ করেন মহিদুল।
তিনি বলেন, ‘ছেলেকে দেখতে না পেলেও আমরা তার চিৎকার শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাদের বাড়ি চলে যেতে বলে এবং পরদিন আদালতে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বলে।’ পরদিন ৩০ নভেম্বর পুলিশ বড় ছেলেকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে জানায় বড় ছেলে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে শুধু ভাই হত্যা মামলায় গ্রেফতারই দেখানো হয়নি, তার কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ দিনমজুর মহিদুলের।
তিনি বলেন, ‘খুনিরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে। আমার ছোট ছেলেকে খুনের স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে বাধ্য করা হয়েছে।’
বড় ছেলের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকেই একমাত্র অভিযুক্ত দেখিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু, মহিদুল এতে নারাজি দিলে, ২০১৭ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।
পিবিআইয়ের চার বছরের তদন্তে বড় ছেলে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই খুনের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতারও করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে