খালেদার অবস্থা স্থিতিশীল, তবে সুস্থ হয়ে ওঠেননি: চিকিৎসক
১৯ জুন ২০২১ ২৩:৫৫ | আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ০১:০৯
ঢাকা: খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক এ এফ এম সিদ্দিকী।
এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) স্থিতিশীল আছেন। তার মানে এই না যে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। আমাদের মেডিকেল টিম, এভারকেয়ার হাসপাতালে সুদক্ষ টিম ও দেশের বাইরে যারা আছেন, সবাই মিলে উনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসাটা আপাতত বাসায় চালিয়ে যাব।’
শনিবার (১৯ জুন) রাতে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ফেরার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এর আগে, শনিবার রাত ৯টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ফেরেন খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আরও পড়ুন- বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘উনার অসুখটা চিকিৎসার মাধ্যমে একধরনের স্থিতি অবস্থায় এসছে। উনি কিউর হয়ে যাননি। উনার যেই হার্টের জটিলতা, কিডনির জটিলতা, লিভারের জটিলতা— সেগুলো কোভিডের কারণে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছিল। সেই অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে। কিন্তু সেই অসুস্থতাগুলো রয়েই গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সেগুলোকে অ্যাড্রেস করার যে চিকিৎসা এবং যে প্রস্তুতি বা প্রক্রিয়া, সেগুলো আমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে করতে পারিনি। এতে একটি রিস্ক থেকেই যাচ্ছে। আমরা প্ল্যান করেছি যে উনাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাব। উনি অবজারভেশনে আছেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ পর আবার আমাদের অপশন রাখতে হচ্ছে যে হাসপাতালে নিয়ে রিভিউ করার প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উনার যে জটিলতাগুলো আছে সেগুলো প্রাইমারি ডিজিজ। সেগুলোর চিকিৎসার জন্য আমরা মেডিকেল বোর্ড থেকে কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা আমরা লিখিত আকারে উনারদের কাছে দেবো।’
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দেশে সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে এ এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা একটি পর্যায় পর্যন্ত তার চিকিৎসাটা চালিয়ে কতগুলো জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু কতগুলো বিষয় আছে, যেমন— লিভারের সমস্যা আমরা ধরতে পেরেছি যে সেটি কোন স্টেজে আছে এবং এমন সব সেন্টারে এসব অ্যাসেসমেন্ট হওয়া উচিত যেখানে আর্টিফিশিয়াল লিভার সাপোর্ট, আর্টিফিশিয়ালি অন্যান্য অ্যাডভান্স টেকনোলজি অ্যাপ্লাই করতে পারে। অসুস্থতা কিন্তু শুধু লিভারে থাকে না, খাদ্যনালীতে হয় যেটা সমস্ত শরীরে তার প্রভাব ফেলে। এতে মেজর কতগুলো কমপ্লিকেশন হতে পারে। সে ধরনের টেকনোলজি বা সে ধরনের অ্যাডভান্সড টিট্রমেন্ট সাপোর্ট আমাদের বাংলাদেশে নেই বলে আমরা মনে করছি। আমাদের লিখিত প্রতিবেদনে সেটি আমরা বলেছি।’
খালেদা জিয়াকে পরিপূর্ণ সুস্থতা ছাড়া বাসায় নিয়ে আসার কারণ উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে রাখাটা রিস্ক বেশি হয়ে যাচ্ছিল। সে কারণে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিন বার উনার রক্তে ইনফেকশন হয়েছে। প্রতিটি ইনফেকশন হাসপাতালের অর্গানিজমে। অর্থাৎ আমরা যখন ব্লাড কালচার করি সেই জীবাণু দেখতে পাই, সেই জীবাণুগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায় যে এটা কোথা থেকে আসছে।’
খালেদা জিয়ার লিভারে অবস্থা সম্পর্কে অধ্যাপক এ এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘উনার আগের যে অসুস্থতা ছিল তার সাথে আমরা বিশেষ করে দেখেছি যে লিভারের ফাংশন মাঝে মাঝে কম্প্রোমাইজড হয়ে যায়। তখন অ্যালবুমিন সিনথেসিস হয় এবং কিডনি দিয়ে অ্যালবুমিন বেশি বের হয়ে যায়। এই দুইটি কারণে উনার রক্তে অ্যালবুমিন কমে যায়। আর লিভারের জটিলতার একটি অংশ হিসেবে উনার মাঝে মাঝে খাদ্যনালীতে ম্যাক্রোস্পেসেফিক, যার জন্য উনার হিমোগ্লোবিন কমে যায়।’
বিদেশে নিয়ে যাওয়া জরুরি কি না— প্রশ্ন করা হলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের এই প্রধান বলেন, ‘উনার হার্টের কিছু কিছু টিট্রমেটে অ্যাডভান্সমেন্ট আমাদের দেশে আছে। কিডনি ট্রিটমেন্টের ওই ধরনের অ্যাডভান্সমেন্ট এখানে নেই, কিছু কিছু ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু লিভারের সমস্যা হয়ে যখন ডিকম্পোজিশন হয়, সেই সমসার সার্বিক মূল্যায়ন করে স্ট্র্যাটেজিংয়ের মাধ্যমে সেগুলোর আনুষাঙ্গিক যে চিকিৎসা প্রয়োজন, সেই টোটাল ট্রিটমেন্ট ও সাপোর্ট আমাদের দেশে নেই।”
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর