পরীমনির মামলার আসামি নাসির-অমি মাদকের মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে
১৫ জুন ২০২১ ১৬:৪৭ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ১৮:১০
ঢাকা: ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া মামলার আসামি তিন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসী এ আদেশ দেন। যে তিন নারী আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে, তারা হলেন— লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা।
এদিন বিকেলে নাসির উদ্দিন ও অমিসহ পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের পুলিশ পরিদর্শক উদয় কুমার মন্ডল। আসামিদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানার সোমবার (১৪ জুন) দিবাগত রাতে দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জিজ্ঞেসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তিনি।
আরও পড়ুন-
- ‘আমি সুইসাইড করার মেয়ে না’
- অমির বাসায় লুকিয়ে ছিলেন নাসির
- ভয়ংকর সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন পরীমনি
- পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহার আদালতে
- ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন পরীমণি
- পরীমণি সম্পর্কে সোহানের আপত্তিকর মন্তব্য , সমালোচনার ঝড়
- পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা: ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ গ্রেফতার ৫
এদিন আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন আব্দুল বাতেন ও খন্দকার মো. হজরত আলীসহ কয়েকজন। তারা রিমান্ড বাতিল চেয়ে আসামিদের জামিনের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
পরে আদালত শুনানি নিয়ে নাসির ও অমিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন এবং লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে নাসির ও অমিসহ এই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, পরীমনির দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় ওই বাসা থেকে বিদেশি মদও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পরীমনির দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি ও বনিসহ দু’টি গাড়িতে উত্তরার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে অমি জানান, বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকা বোট ক্লাবে তার একটু কাজ আছে। এরপর তারা সবাই গাড়ি নিয়ে বোট ক্লাবে যান। বোট ক্লাব বন্ধ থাকলেও অমি একজনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে ক্লাব খুলে দেওয়া হয়। এসময় অমি কাজের জন্য ভেতরে যান এবং বাকিদের বলেন, তারা চাইলে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরটা ঘুরে দেখতে পারেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, পরীমনির ছোট বোন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে চাইলে তারা গাড়ি থেকে নেমে বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করেন। এসময় নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাদের বারে প্রবেশ করে কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে চাইলে নাসির উদ্দিন ও অমি তাদের মদপান করার জন্য জোর করেন। একপর্যায়ে তারা পরীমনির মুখে জোর করে মদের বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এ পর্যায়ে পরীমনি দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পান। একই সময়ে নাসির কৌশলে পরীমনির ওপর যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন। নাসির উদ্দিন টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করেও পরীমনির গায়ে ছুঁড়ে মারেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, নাসির উদ্দিনকে পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করা হয়। এসময় পরীমনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করার চেষ্টা করলে তার হাত থেকে মোবাইল ফোন ফেলে দেওয়া হয়। ফোনটি তুলে কল নিতে চাইলে আবার ফোনটি তার হাত থেকে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার চার দিন পর রোববার (১৩ জুন) রাতে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার কথা জানান। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। পরে রাতেই তিনি বনানীর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি জানান, ঘটনার পর তিনি বনানী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এরপর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কেউ সহায়তা করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় তিনি প্রাণভয়ে ভীত বলেও জানান সাংবাদিকদের।
পরে রোববার দিবাগত রাতেই রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পরীমনির বাসায় যায়। পরীমনির অভিযোগের ঘটনাস্থল সাভার থানার অধীন হওয়ায় তার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে সেই অভিযোগ সাভার থানার কাছে পৌঁছে দেয় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাভার থানায় মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের হয়।
মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমির নাম উল্লেখ করে আরও চার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর দুপুরেই অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি ও তিন নারীকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন-
- কে এই ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন?
- অমির ফাঁদে পড়ে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনি
- নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে পরীমনির মামলা
- নাসিরসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা করবে ডিবি
- অবশেষে পরীমনির বাসায় পুলিশ, অভিযোগ পাঠানো হলো সাভার থানায়
সারাবাংলা/এআই/টিআর