গভীর রাতে ক্লাস নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন ড. কলিমউল্লাহ
১০ জুন ২০২১ ১৩:৪৯ | আপডেট: ১০ জুন ২০২১ ১৯:০৮
রংপুর: এবার রাত সাড়ে তিনটায় ক্লাস নিয়ে মেয়াদের শেষ সময়ে এসে আবারও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
বুধবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ৩টা ২০ মিনিটে, তথা বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্টার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘পলিটিক্যাল থট’ কোর্সের ক্লাস নেন তিনি। ক্লাস নেওয়ার বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনা।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে যোগদানের পর একাই অর্ধশতাধিক কোর্স নিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে আসেন তাই কোর্সগুলোর নামকাওয়াস্তে ক্লাস নেন মধ্যরাতে। নিজ কার্যালয়, সিন্ডিকেট, কনফারেন্স রুম এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাধ্যতামূলক উপস্থিত রেখে শ্রোতা তৈরির নামে এসব ক্লাস নেন। ক্লাসগুলো হয় রাত আটটার পর থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত। এসব ক্লাস হয় বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে একসঙ্গে। আর পরীক্ষার খাতা কর্মচারী দিয়ে মূল্যায়ন ও পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকেও মার্কস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এসব কোর্স বাবদ মোটা অংকের পারিতোষিকও নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে সেসময় গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পর বন্ধ করা হয় সেসব কোর্সের ক্লাস। এছাড়া ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ক্লাস করে মেসে ফেরার পথে ছিনতাইকারির হাতে গুরুতর আহত হন ফরহাদ হোসেন এলিট নামে এক শিক্ষার্থী। ছিনতাইয়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মাঝরাত পর্যন্ত ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
জেন্টার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জানায়, বুধবার রাত সাড়ে আটটায় বিভাগের ২০১৯-২০ইং শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘পলিটিক্যাল থট’ (কোর্স কোড- ১২০২) কোর্সের ক্লাস রাত তিনটায় নেওয়ার কথা জানান ভিসি কলিমউল্লাহ। এরপর অনলাইন প্লাটফর্ম গুগল মিট-এ রাত তিনটা ২০ মিনিটে ক্লাস শুরু হয়। প্রায় ৩৫ মিনিট চলা ক্লাসের শুরুতে প্রায় ২৮ জনের মতো যুক্ত থাকতে পারলেও শেষ পর্যন্ত যুক্ত থাকার সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ১২ জনের মতো। রাত প্রায় ৩টা ৫৫ মিনিটে ক্লাস শেষ করেন তিনি।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, এটি কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। তার আসলে মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তার যারা কাছের লোকজন রয়েছে তাদের উচিত তার (ভিসি) মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তিনি বলেন, ড. কলিমউল্লাহ একজন মেয়াদোর্ত্তীণ ভিসি। গত ৩১ মে তিনি ৪ বছরের মেয়াদ শেষ করেছেন। তিনি কিভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন বলে প্রশ্ন রাখেন।
তবে ভিসি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবি, ড. কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। তাই তার মেয়াদ শেষ হবে ১৩ জুন। এসংক্রান্ত একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ড. কলিমউল্লাহ দাবি করেছেন তার মেয়াদ ১৩ জুন পর্যন্ত।
এদিকে ড. কলিমউল্লাহর মেয়াদ শেষ নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটতেই গতকাল বুধবার (৯ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫ম ভিসি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। যা ১৪ জুন ২০২১ তারিখ হতে কার্যকর হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে ২০১৭ সালের ১ জুন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে বেশির ভাগ সময় ক্যাম্পাসে না থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন করে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা। উপাচার্যসহ এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো দুটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে ইউজিসি। এর মধ্যে জমা দেওয়া একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ভিসিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়মের সত্যতা পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উল্টো সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এএম