‘তথ্য সংগ্রহ আর চুরি এক নয়’
৯ জুন ২০২১ ১৭:৫৯ | আপডেট: ৯ জুন ২০২১ ১৮:০২
ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তথ্য সংগ্রহ আর তথ্য চুরি এক জিনিস নয়। তথ্য সংগ্রহ করার নিয়ম আছে। সংগ্রহ আর চুরির মধ্যে প্রভেদ ভুলে, এটিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
বুধবার (৯ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আলহামরা নাসরিন হোসেন লুইজা সম্পাদিত ‘ছবির ভাষায় মহানায়ক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ অ্যালবাম প্রকাশনা উৎসবে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
দেশে তথ্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র এমন মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোজিনার ঘটনাটি অনভিপ্রেত। সেটি তিনি আগেও বলেছেন আজও একই কথা বলবেন। কিন্তু, দুর্নীতি বা যেকোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য মন্ত্রণালয় বা যেকোনো অফিসে সাংবাদিকরা যেমন আবেদন করতে পারে, নাগরিকরাও করতে পারে। সে পদ্ধতিতে না পেলে তথ্য কমিশন আছে। সেখানে আবেদন করলে কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য দেয়ার জন্য বলে এবং গাফিলতি হলে জরিমানাসহ নানাধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তথ্য কমিশন গঠনের পর এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজারের মতো আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। সুতরাং, দুর্নীতি বা যেকোনো তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেই জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারই তথ্য কমিশন গঠন করেছে এবং সেভাবে মানুষ তথ্য পাচ্ছেও।
ড. হাছান বলেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর পদে থাকাকালীনও তিনি কোনো অফিসে গিয়ে বিনা অনুমতিতে তাদের অগোচরে কোনো গোপনীয় তথ্য নিয়ে নিলে নিশ্চয়ই তিনি অপরাধী এবং সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে সেই অফিসের কর্তৃপক্ষ যেকোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আর সেই তথ্য যদি কোনো রাষ্ট্রীয় গোপন নথি হয় তাহলে সেই অপরাধটা আরও বড়।
প্রত্যেক মন্ত্রীকে দুটি শপথ নিতে হয়। একটি হচ্ছে মন্ত্রী হিসেবে আরেকটি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা করার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেজন্য রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা করা যেকোনো মন্ত্রীর দায়িত্ব। টিআইবি এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্য চুরি দুটি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলেছে বিধায় আমি টিআইবি’র এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই।
তবে, টিআইবি’র মতো সামাজিক সংগঠনের দরকার আছে। তারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। এটিই স্বাভাবিক এবং তারাও তাই চান, বলেন ড. হাছান।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, তবে অতীতে দেখা গেছে টিআইবি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার কথা বললেও অনেকক্ষেত্রে গবেষণা না করে শুধু রিপোর্ট তৈরি করে সেটিকে গবেষণা বলে চালিয়ে দেয়। যেটি সমীচীন নয়। ২০১০ সালের শুরুতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে বন বিভাগ নিয়ে টিআইবি ২০১০ সালে যে চলতি দুর্নীতি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। সেখানকার তথ্য ছিল পুরনো। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের। এছাড়া, টিআইবি যেসব দেশ থেকে ফান্ড পায় তাদের নিয়ে কোনো রিপোর্ট করতে দেখা যায় না।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য একটি সূত্রের ওপর নির্ভরতা নিয়ে টিআইবি প্রশ্ন রেখেছে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ হচ্ছে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা দেশগুলোর প্রথম সারির অন্যতম। এবং বাংলাদেশ শুরু থেকেই একটি সূত্রের ওপর নির্ভর করেনি। যত স্থান থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছে। কিন্তু যখন ভ্যাকসিন বাজারে এলো তখন সবদেশই নিজেদের প্রয়োজনটার কথা মাথায় রেখেছে। অন্যদেশকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি। তখন সিরাম ইনস্টিটিউট প্রথমে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং সেই মোতাবেক ভ্যাকসিনও এসেছে। কিন্তু, পরে ভারতের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও প্রথম থেকেই যোগাযোগ রাখার কারণেই এখন চীন ও অন্যান্য দেশ থেকেও ভ্যাকসিন আসছে। হঠাৎ করে যোগাযোগ করলে এতো তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন আসতো না।
এর আগে, তথ্যমন্ত্রী ‘ছবির ভাষায় মহানায়ক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ অ্যালবাম মোড়ক উন্মোচনকালে গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ কিছু ছবি এবং বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে ছবির বর্ণনার প্রশংসা করেন। নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কাজের জন্য আলহামরা নাসরিন হোসেন লুইজা, গ্রন্থটির প্রকাশক বর্ণ প্রকাশ লিমিটেড এবং সম্পাদকের সহযোগীদেরকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
মন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এ ধরনের অ্যালবাম খুবই সহায়ক।
সারাবাংলা/জেআর/একেএম