তত্ত্বাবধায়ক আবার আনুন, নইলে পরিণতি খারাপ হবে: ফখরুল
৮ জুন ২০২১ ২০:৩৮
ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার ফিরিয়ে না আনলে পরিণতি খুব খারাপ হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
‘বিএনপি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি তো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে, বার বার, একবার নয়। জিয়াউর রহমান শাহাদাৎ বরণের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে আপনারা (আওয়ামী লীগ) কী বলেছেন? উই আর নট আনহ্যাপি। আমরা অখুশি নই।’
‘এবারও ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন যখন ক্ষমতা দখল করল, তখন তারা (আওয়ামী লীগ) বলল, আমাদের আন্দোলনের ফসল। সুতরাং গণতন্ত্রকে বার বার হত্যা করছে কারা? আর আজকে গণতন্ত্রকে হত্যা করল কে? যে সংবিধান ১৯৭২ সালে আপনাদের দ্বারা তৈরি, সেই সংবিধান কেটে-ছিড়ে শেষ করে দিয়েছে কে? আপনারা (আওয়ামী লীগ)’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করলেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে মারলেন, বুকের উপর উঠে নাচলেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কে সরালো?— আওয়ামী লীগ। এই শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার কেড়ে নিলেন। মানুষ যে ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে গণতান্ত্রিক উপায়ে, সেই অধিকারই তো এখন নাই। ফলে কী হয়েছে? শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বন্ধ হয়েছে, হয়নি বন্ধ? এটা মাথার মধ্যে ওদের (সরকার) রাখতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আহ্বান করছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার আনুন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ যে রুদ্ধ হয়ে গেছে, সেটাকে আর রুদ্ধ করবেন না। এর পরিণতি সারাবিশ্বের জানা। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হতে হবে। তা নাহলে এর রেজাল্ট খুব খারাপ হবে, পরিণতি খুব খারাপ হবে।’
জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান প্রথম যে পার্লামেন্ট তৈরি করলেন, সেই পার্লামেন্টের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শাহ আজিজ। আওয়ামী লীগের নেতা আসাদুজ্জামান ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। প্রথম দিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য শেষ হলে আসাদুজ্জামান পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘মিস্টার স্পিকার আপনার মাথার উপরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববুর রহমানের একটা ছবি ছিল, সেটা গেল কোথায়? সুতরাং এটা না লাগানো পর্যন্ত আমরা এ পার্লামেন্ট বয়কট করলাম’— বলে বের হয়ে গেল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ তাদের সঙ্গে প্রচুর মিটিং-সিটিং করেছেন, কথা-বার্তা বললেন। পাশাপাশি পড়ালেখা করলেন কাগজপত্র কী আছে, সেটা দেখার জন্য। তারপর ২১ দিনের মাথায় তাদেরকে কনভিন্স করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসলেন এবং পার্লামেন্টে দাাঁড়িয়ে উনি (শাহ আজিজ) বক্তব্য শুরু করলেন— ‘আপনারা এই দাবিতে চলে গিয়েছিলেন যে, এখানে ছবিটা নাই কেন? আমি এগুলোর উপর প্রচুর পড়াশোনা করেছি, তদন্ত করেছি। আমি যেটা দেখলাম, আপনাদের নেতা আব্দুল মালেক উকিল, যিনি পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন উনি নিজের হাতে ছবিটা নামিয়ে নিয়ে গেছেন এখান থেকে।’
‘এখন তারা বলেন— মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। আরে হত্যা তো করেছ তোমরা। তোমাদের শফিউল্লাহ আর্মির চিফ ছিলেন। কী করেছেন? যেয়ে স্যালুট করেছেন মোস্তাককে। আস্থা জ্ঞাপন করেছেন। এয়ার চিফ একে খন্দকার এবং নেভাল চিফ গিয়ে মোস্তাককে স্যালুট করেছে। আর এখন বলছেন বিএনপি নাকি এর সঙ্গে জড়িত, জিয়া জড়িত। এসব মিথ্যাচারের মাধ্যমে সত্যকে গোপন করতে পারবেন না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ