Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের ডিম ছেড়েছে মা মাছ, হালদায় উৎসব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২১ ২১:০৮ | আপডেট: ২ জুন ২০২১ ২২:২৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে পাঁচদিন পর ফের ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় প্রজনন সক্ষম মাছ। এবার ডিমের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন সংগ্রহকারীরা। ফলে পাঁচদিন আগের হতাশা কাটিয়ে হালদা পাড়ে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

হালদা গবেষকরা জানিয়েছেন, পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমে শূন্যের কোঠায় পৌঁছানোর পর এবং বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় অনুকূল পরিবেশ পেয়ে মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বুধবার (২ জুন) বিকেল ৫ টার দিকে হালদা নদীতে হাটহাজারীর গড়দুয়ারা পয়েন্ট থেকে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে হালদা নদীতে আজিমের ঘাট, অঙ্কুরিঘোনা, আমতুয়া, সত্তার ঘাট, রামদাশ মুন্সীর হাট, মদুনাঘাট, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময় স্থানীয় সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ শুরু করেন। প্রায় ৩৮০টি নৌকায় হাজারখানেক মানুষ হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন।

গড়দুয়ারা এলাকায় ডিম সংগ্রহকারী ওসমান গণি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তিনটি নৌকায় ডিম সংগ্রহ করেছি। পাঁচ বালতির মতো পেয়েছি। ইনশল্লাহ, গতবারের চেয়ে ডিম অনেক ভালো পাওয়া গেছে। আমরা সন্তুষ্ট।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ছিলাম, অনুকূল পরিবেশ পেলে মা মাছ আবারও ডিম ছাড়বে। সেই অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। প্রথমবার যখন ডিম ছেড়েছে তখন হালদার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ৭২ শতাংশ। গতকাল (মঙ্গলবার) ছিল শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ অর্থাৎ এক শতাংশেরও কম। তাহলে মা মাছ মিঠা পানি পেয়েছে। আবার গত তিনদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে, গতকাল পাহাড়ি ঢলও নেমেছে।’

বিজ্ঞাপন

তবে অমাবস্যা-পূর্ণিমার ‘জো’ ছাড়াই এবার ডিম ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত চারটা জো যাবার পর মাছ ডিম ছাড়ার জন্য আর জোয়ের অপেক্ষা করে না। কারণ তখন ডিমগুলো এতই ম্যাচিউড হয়ে যায় যে, সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে মা মাছ। এ কারণে আমরা গত দুদিন ধরে প্রচুর মা মাছ নদীতে ভাসতে দেখেছি।’ দ্বিতীয় দফায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ‘অনেক বেশি’ বলে জানান মনজুরুল কিবরিয়া।

প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখন তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।

তবে পূর্ণিমা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই গত ২৬ মে রাতে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রথম দফায় ডিম ছেড়ে দেয় মা মাছ। গবেষকরা একে ‘অস্বাভাবিক প্রজনন’’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের মতে, অনাবৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রচুর পরিমাণে লবণাক্ত পানি হালদা নদীতে ঢুকে পড়ায় সহ্য করতে না পেরে প্রজনন সক্ষম মা মাছ ডিম ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

সরকারিভাবে কোনো হিসাব প্রকাশ করা না হলেও রিসার্স ল্যাবরেটরি তাদের জরিপের ভিত্তিতে জানিয়েছিল, প্রথম দফায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর (২০২০) হালদা নদীতে রেকর্ড ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটোকরেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

উৎসব টপ নিউজ ডিম মা মাছ হালদা

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর