দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে— সংসদে প্রধানমন্ত্রী
২ জুন ২০২১ ২০:৪৪
সংসদ ভবন থেকে: জাতীয় সংসদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহের পাশাপাশি দেশেই এর উৎপাদনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বুধবার (২ জুন) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম মনিরা সুলতানা।
তার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার করোনা থেকে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে শুরু থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শুরুতেই দেশব্যাপী ও অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কার্যকরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়াসহ জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী, আর্থিক প্রণোদনা, যথাসময়ে টেস্টিং কিট আমদানি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ল্যাব স্থাপনসহ করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় ভাইরাসের বিস্তার রোধে দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশ সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের যেসব দেশ ভ্যাকসিন কার্যক্রম প্রথমদিকে শুরু করতে সক্ষম হয়, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। যথাসময়ে করোনার ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়ে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে। ভ্যাকসিন সংগ্রহে সরকার নেওয়া পদক্ষেপগুলো হলো- ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সংগৃহীত এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দ্বারা করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে; ১৮ মে পর্যন্ত দেশের চল্লিশোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে মোট ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৩১২ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভারতে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায় এপ্রিলে ভারত সরকার ভ্যাকসিন রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশ সরকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে চীনের সিনোফার্ম থেকে ভ্যাকসিন কেনার বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট; প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন চীন থেকে পাওয়া যাবে। চীন সরকারের কাছ থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। এসব ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ ২৫ মে শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জরুরিভিত্তিতে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছছে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে। সরকার রাশিয়া ভ্যাকসিন আমদানির জন্যেও ইতোমধ্যে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। মহামারি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার।’
এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযাগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম