Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না— মির্জা ফখরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২১ ২০:৫৭ | আপডেট: ২ জুন ২০২১ ০১:১৫

ঢাকা: বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না বলেন মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১ জুন) সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিল মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। উনি কারাগারে বলেই গণতন্ত্র এখন কারাগারে, গণতন্ত্র বন্দি হয়ে আছে। আমাদের অসংখ্য নেতা প্রাণ হারিয়েছেন, গুম হয়ে গেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। তারপরও কিন্তু বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিএনপি আছে, চলছে এবং অত্যন্ত সোচ্চার হয়েই আছে।’

‘আসুন আমরা সমস্ত প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ তাকে সামনে রেখে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার যে আপসহীন মনোভাব সেটাকে সামনে রেখে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কখনো পিছু ফিরে তাকাবেন না। আর কখনো এই কথা মনে করবেন না যে, আমরা পারব না। আমরাই পারব এবং অবশ্যই জয়ী হবো। যে দানব আমাদের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে, যে দানব শুধুমাত্র লুন্ঠনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করে দিয়েছে। সেই দানবকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠান করতে হবে আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিহিংসার কারণেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে এখনো অসুস্থ অবস্থায় আছেন। এই সরকার কত বড় প্রতিহিংসা পরায়ন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বাইরে নিয়ে যাও। কিন্তু তারা বাইরে যেতে দিচ্ছে না।’

‘এটা হচ্ছে তাদের দূবর্লতা, তাদের রাজনীতির যে দেউ্লয়িাপনা এবং জনগণ থেকে যে বিচ্ছিন্ন— তারই প্রমাণ। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা দুর্নীতিপরায়ন সরকারে পরিণত হয়েছে, অত্যাচারি সরকারে পরিণত হয়েছে, ফ্যাসিবাদী সরকারে পরিণত হয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরে সবাই ভেবেছিলো যে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে, বিএনপিকে আর দেখা যাবে না। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির পতাকা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকাকে তুলে ধরেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ বছর টানা সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন খালেদা জিয়া। আমি তো মনে করি, এখন অব্দি এই দেশে জীবিত আছেন যেসমস্ত রাজনীতিবিদ তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মহিয়ষী নেত্রী হচ্ছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার অবদান কারও চেয়ে খাটো নয়।’

প্রসঙ্গ জিয়া

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কেন আমাদের কাছে এতো প্রিয়? কেন তাকে আমরা আমাদের বুকের মধ্যে ধারণ করে থাকি? কেন আমরা বলি কোনো দিনও তাকে ভোলা যাবে না? যিনি কোনো দিন মৃত্যুবরণ করবেন না মানুষের মন থেকে, নেতা হিসেবে, পথপ্রদর্শক হিসেবে কেন তাকে আমরা বেছে নিয়েছি? কারণ, সবচেয়ে কঠিন দুইটি সময় তিনি এই জাতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত আমরা সবাই কিন্তু স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি, সাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা সংগ্রাম করেছি, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী করেছেন, শহীদ সোরাওয়ার্দী করেছেন, শেরে বাংলা ফজলুল হক করেছেন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সময় আমরা যারা ছাত্র ছিলাম, আমরা স্বাধীন পূর্ববাংলা ঘোষণাও করে দিয়েছিলাম।’

‘কিন্তু আওয়ামী লীগ— যারা দাবি করে যে, স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, যাদের দিকে জনগণ তাকিয়ে ছিল, সংগ্রামরত আন্দোলনরত লক্ষ্য-কোটি মানুষ ভাবছিল এই মুহূর্তে তাদের (আওয়ামী লীগ) কাছ থেকে একটা ঘোষণা আসবে, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তারা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের নেতারা সীমান্ত পার হয়ে চলে গেলেন। এই বিষয়গুলো কিন্ত আমাদের মনে রাখতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আর সেই সেময় এক অখ্যাত মেজর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দিলেন যে, আমি মেজর জিয়া- বলছি আমরা বিদ্রোহ করলাম সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। দ্যাটস ইমপরটেন্ট। কারণ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন এই পূর্ববাংলার নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ওর মধ্যেই তিনি (জিয়া) পরিষ্কার ঘোষণা দিলেন- আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করছি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এটা হচ্ছে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‘অর্থাৎ যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছেন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ৭ই নভেম্বর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সমগ্র জাতি যখন দিশেহারা, ১৫ আগস্ট দুর্ঘটনার পর জাতি যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় সেই সময় আবার জিয়া এগিয়ে এসেছেন। এটা তার দ্বিতীয় উভ্যুত্থান। রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করবার জন্য তিনি সেদিন নেতা হিসেবে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই সিকদার, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ক সম্পাদক সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিথীকা বিনতে হোসাইন, ইয়াসীন আলী প্রমুখ।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল। আলোচনা সভায় বিএনপির কয়েক শ’ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এজেড/একেএম

টপ নিউজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বেচ্ছাসেবক দল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর