Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইয়াসের প্রভাবে হালদায় মা মাছের ‘অস্বাভাবিক’ প্রজনন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ মে ২০২১ ১১:১৯ | আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ১১:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য যেসব অনুকূল পরিবেশ থাকার দরকার; এবার তার কোনোটাই যথেষ্ট পরিমাণে ছিল না প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে। তারপরও বুধবার (২৬ মে) রাত ১২টা থেকে এই নদীর মা মাছ পরিপূর্ণভাবে ডিম ছাড়তে শুরু করে। এভাবে মাছের ডিম ছাড়াকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে হালদা গবেষকেরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব পড়েছে হালদা নদীর মাছের প্রজনন প্রক্রিয়ায়।

বিজ্ঞাপন

হালদা গবেষকেরা জানান, প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে এবার পূর্ণিমা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। ফলে এবার প্রত্যাশিত ডিমও পাওয়া যাবে না বলে ধারণা তাদের। তবে আশা করছেন, বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে এবং পাহাড়ি ঢল নামলে মা মাছ আবারও ডিম ছাড়বে।

বিজ্ঞাপন

নদীতীরে অবস্থান করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত দুদিন ধরে প্রচুর পরিমাণ লবণাক্ত পানি সাগর থেকে কর্ণফুলী হয়ে হালদায় ঢুকেছে। লবণাক্ত পানি সহ্য করতে না পেরে মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। এজন্য আমরা এই প্রজননকে স্বাভাবিক বলছি না। আমাদের আশা, বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে এবং পাহাড়ি ঢল নামলে মা মাছ আবারও ডিম ছাড়বে।

তিনি জানান, বুধবার রাত ১২টার দিকে হাটহাজারীর আজিমের ঘাট, অঙ্কুরিঘোনা এলাকায় কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। সকাল পর্যন্ত হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার আমতুয়া, সত্তার ঘাট, রামদাশ মুন্সীর হাট, মদুনাঘাট, গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে স্থানীয় সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করেন।

তিনি আরও বলেন, দূষণ বন্ধ এবং মা মাছ রক্ষায় প্রশাসন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আমাদের ধারণা ছিল রেকর্ড পরিমাণ ডিম পাওয়া যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। কারণ, চট্টগ্রামে এবার যথেষ্ঠ পরিমাণে বৃষ্টি হয়নি। এ কারণে পাহাড়ি ঢল ছিল না উজানে। মা মাছ তার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ পায়নি।

চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার ‍দীর্ঘ এলাকাজুড়ে অবস্থান হালদা নদীর। ডিম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে হালদা পাড়ে বসেছে হাজারো মানুষের মিলনমেলা। প্রায় ৩০০ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী ডিম সংগ্রহ করছেন। সব নৌকা এবং আহরণকারীরা এখন নদীতে আছেন। দুপুরের পর থেকে ডিম নিয়ে তারা তীরে আসতে শুরু করবেন। তখন কি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে, সেটা জানাবে স্থানীয় প্রশাসন।

গত বছর (২০২০) হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল।

২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

 

সারাবাংলা/আরডি/এএম

চট্টগ্রাম মা মাছ হালদা নদী

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর