যুব সমাজকে মাছ চাষে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
২২ মে ২০২১ ১৫:৩০
ঢাকা: যুব সমাজকে মৎস্য উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে ব্যাপক একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। কাজেই এই সুযোগটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আদর্শ নিয়ে এবং নীতি নিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই আদর্শ-নীতি নিয়েই এগিয়ে যাবে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
শনিবার (২২ মে) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় এক ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৎস্যজীবী আমাদের এই প্রতিষ্ঠানকে বলব, আপানদের নিজেদেরও সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করা এবং আমাদের যুব সমাজ যাতে আরও এগিয়ে আসে মৎস্য উৎপাদনে মনোযোগী হয়। সেদিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে। এখানে ব্যাপক একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। কাজেই সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।’
এই জন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সুযোগ সরকারের পক্ষ থেকে করে দিয়েছি বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এইটুকু বলব যে আদর্শ নিয়ে এবং নীতি নিয়ে তিনি এই দেশ স্বাধীন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ এবং নীতি নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। স্বাধীনতার ৫০বছর, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা এটাই প্রতিজ্ঞা করব–এই দেশকে আমরা সবদিক থেকে উন্নত সমৃদ্ধ করব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
মৎস্যজীবী লীগের সকল স্তরের নেতকার্মীকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যেন করোনা ভাইরাস কারো ক্ষতি করতে না পারে। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থাকতে হবে। অপরকে সুরক্ষিত করতে হবে। সেজন্য আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ম, নীতি এবং বিধি আপনারা মেনে চলবেন।’
মৎস্যজীবী লীগের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে গেছে। আামদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করবে। আমরা ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, ১৯৯৮ সালেই দেশকে খাদ্যে স্ব্যয়ংসম্পূর্ণ করে তুলি। দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকারে আসি তখনও আমাদের লক্ষ্য পূরণ করি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। খাদ্যের সাথে পুষ্টিটা যাতে যোগ হয় তার ব্যবস্থা নেই। সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকেই সচেষ্ট হই।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে যুব সমাজকে ট্রেনিং দেওয়া, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, জলাধারগুলি সংস্কার করা, মাছ উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার ব্যবস্থা করা, যাতে গবেষণা হয় সেই গবেষণার ব্যবস্থা করা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সব থেকে নিরাপদ পুষ্টি মাছ’ই দেয়। একটা মানুষ যদি ৬০ গ্রাম মাছ খেতে পারে, সেটা তার জন্য যথেষ্ট। আমরা সেখানে অন্তত ৬২ গ্রাম পর্যন্ত নিতে পারি বা দিতে পারি, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হচ্ছে।’
মৎস্য খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে শুধুমাত্র চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেরাই যদি মৎস্য খামার করে, মৎস্য খামার থেকে মাছ উৎপাদন করে এবং সেটা যদি বিক্রি করে তাহলে পয়সা পেতে পারে। পাশাপাশি আমরা সারাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার। সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা যায় এবং সেখানে মৎস্য জাত যেকোন পণ্য সেগুলি প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে পারে, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হচ্ছে।’
যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নদী নালা খাল বিলের দেশ। বাংলাদেশে শত শত নদী রয়েছে। তাছাড়া খাল বিল জলাধারগুলি সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে যাতে আরও বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়, তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
আমাদের মাছের উৎপাদন যেখানে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ছিল। এখন আমরা প্রায় ৫০লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি উৎপাদন করা শুরু করেছি। আর ইলিশ উৎপাদনে পৃথিবীতে আমরা কিন্তু এখন এক নাম্বার দেশ হিসাবে। আমরা ইলিশ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই। আর মাছের প্রজনের সময়ে মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ খাদ্য সহায়তা বিনা পয়সার খাদ্য সরবরাহ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
এভাবে মাছ উৎপাদনে বিশেষ যত্ন নিচ্ছি। যে কারণে খাদ্য নিরাপত্তার পর পুষ্টি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়াতে এখন কিন্তু আস্তে আস্তে মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সায়ীদুর রহমানের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এ ছড়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য শাহাবুদ্দীন ফরাজী,এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার। সভায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সায়ীদূর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর।
সারাবাংলা/এনআর/একে