শেখ হাসিনা মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা
১৬ মে ২০২১ ২২:০৭ | আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০১:১৪
এসএম কামাল হোসেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সারাবাংলার সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন তিনি। সারাবাংলার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। দুজনের কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
সারাবাংলা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময় সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
এসএম কামাল হোসেন: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে দেশীয়, আন্তর্জাতিক ও স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশে শুরু হয় অন্ধকার যুগ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন অবৈধ রাষ্ট্রপতি। তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর ভেতরে তথাকথিত ক্যুর মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শত শত জোয়ান অফিসারকে হত্যা করেন। এছাড়া সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাড়ে চার লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর বাইরে গুম, খুন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলছিল। ওই সময় বিমানবাহিনীর ৫৯১ জন অফিসারকে একদিনে হত্যা করা হয়। তখন রাত দশটা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ দিয়ে জিয়াউর রহমান দেশ পরিচালনা করতেন। তার ক্ষমতার পার্টনার ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি এবং তথাকথিত সেদিনকার অতিবিপ্লবী ডানপন্থী শক্তিরা। এই সুবিধাবাদীদের নিয়ে জিয়াউর রহমান দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশ পরিচালনা করছিলেন।
সারাবাংলা: ’৭৫ পরবর্তী সময়ে বলতে গেলে নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের তখন আসলে কাকে প্রয়োজন ছিল?
এসএম কামাল হোসেন: সেই অন্ধকার যুগে যখন আওয়ামী লীগ দ্বিধাগ্রস্থ, যখন দুঃশাসনের স্টিম রোলার চলছিল নেতাকর্মীদের ওপর, যখন আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে দেশের মাটি থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছিল তখন নেতাকর্মীরা আসলে আরেকজন বঙ্গবন্ধুকে খুঁজছিলেন। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর সেই প্রতিচ্ছবি কেবল জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যেই দেখতে পেয়েছিল। সে কারণে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ জিয়ার সেই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শেখ হাসিনা সেদিন বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা হিসেবে বাঙালির মাঝে এসে উপস্থিত হন। আজকের প্রধানমন্ত্রী সেদিনকার শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিলেন।
সারাবাংলা: শেখ হাসিনা দেশে ফিরে কোন কাজটি শুরু করেছিলেন?
এসএম কামাল হোসেন: জননত্রেী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসার পর তাকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। শেখ হাসিনা প্রথম ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করলেন। জিয়া-এরশাদ এরপর খালেদা জিয়া, যারা প্রায় ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল, তাদের বিরদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। এই অপশক্তিই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, যে শক্তি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এইসব শক্তির মধ্যে জিয়া-এরশাদের বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রথম লড়াই-সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছিল।
সারাবাংলা: শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রাণশক্তি কোথা থেকে পেয়েছিলেন?
এসএম কামাল হোসেন: জননেত্রী শেখ হাসিনার পথ কন্টকাকীর্ণ ছিল। তার পথ মসৃণ ছিল না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আসার আগেও তাকে অনেকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। দেশে আসার পর যে ৩২ নম্বর বাড়ি, যে বাড়ি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে- সেই বাড়িতে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের ১ লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত সেদিনকার বাংলাদেশ পরিচালিত হয়। যে বাড়িতে মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্ত, বেগম মুজিবের রক্ত, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের রক্ত- সেই বাড়িতে শেখ হাসিনা ঢুকতে পারেননি। জিয়াউর রহমান তাকে ঢুকতে দেয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সামনের রাস্তার বসে ঢুঁকরে ঢুঁকরে কেঁদেছেন আর জায়নামাজ বিছিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন এবং শপথ নিয়েছেন। আর এই শপথ নেওয়ার পেছনে বাংলার মানুষের ভালোবাসা ছিল। তিনি রাজনীতি করার প্রাণশক্তি পেয়েছেন বাংলার জনগণের কাছ থেকে। সেই প্রাণশক্তির জোরেই তিনি বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
সারাবাংলা: শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
এস এম কামাল হোসেন: জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলেই আজ যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছিলেন, তাকে হত্যার পর তা ধ্বংস করেছে জিয়া-এরশাদ-খালেদা; যারা ২৮বছর ক্ষমতায় ছিল। সেই দেশকে শেখ হাসিনা বিশ্বের দরবারে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সেই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সমৃদ্ধি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এসেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষ ভোটের ও ভাতের অধিকার পেয়েছে। আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইট যুগে প্রশে করেছে বাংলাদেশ, পারমাণবিক ও সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করেছে, গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছে, পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছে, সীমান্ত চুক্তি হয়েছে, সমুদ্রসীমা জয় হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রায় ১৮ হাজার কমিউিনিটি ক্লিনিক করেছেন। বয়স্ক ও বিধরারা ভাতা পাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ফিরেছেন বলেই বাংলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রামে ছয় লেন হয়েছে। এছাড়া তার সরকারের নেতৃত্বেই হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন, যেখানে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
সারাবাংলা: তাহলে কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে?
এসএম কামাল হোসেন: হ্যাঁ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও তার পথ কন্টকাকীর্ণ, এখনও মসৃণ নয়। আজও সেই ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করছেন। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তাদের প্রতিনিধিরা এবং যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তাদের প্রতিনিধি; যারা ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, তাদের প্রতিনিধিরা আজ আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা দেখেছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর তাকে একবার-দুবার নয়, ২১ বার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সর্বোপরি চূড়ান্ত হামলা হয়েছিল ২০০৪ সালে। গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সারাবাংলা: স্বাধীনতার ৫০ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে?
এসএম কামাল হোসেন: শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আমি মনে করি, শেখ হাসিনা বাঙালির জন্য আর্শীবাদ। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতীক, সমৃদ্ধির প্রতীক গণতন্ত্রের প্রতীক, সততার প্রতীক। শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদ্রুপ করে বলা তলাবিহীন ঝুঁড়ি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সেই দেশের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন শেখ হাসিনার উন্নয়ন-সমৃদ্ধির প্রশংসা করছেন। শেখ হাসিনার প্রশংসা করছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, কমনওয়েলথ মহাসচিব, ওআইসির মহাসচিব, জাতিসংঘের মহাসচিব। জননত্রেী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী আছেন বলে দেশের মানুষ আজ করোনার মধ্যেও সফলভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যেও বিশ্ব নেতৃত্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। শেখ হাসিনা সফলতা, দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করছেন এবং সংকট মোকাবেলায় তার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা বিশ্বের অনন্য নেত্রী, তিনি ক্রাইসিস মোকাবিলায়ও অনন্য।
সারাবাংলা: শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
এসএম কামাল হোসেন: শেখ হাসিনা বাংলা ও বাঙালির। শেখ হাসিনা আছে বলেই বাংলাদেশ ভালো আছে, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা’ই। তিনি এগিয়ে গেল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। যারা শেখ হাসিনার চলার পথকে কন্টকাকীর্ণ করতে চান, বাধাগ্রস্থ করতে চান, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে চান- তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ করতে হবে। সততা, দেশপ্রেম, সাহসিকতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী এবং মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সারাবাংলা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এসএম কামাল হোসেন: সারাবাংলাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম কামাল হোসেন টপ নিউজ শেখ হাসিনা সাংগঠনিক সম্পাদক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস