যাত্রীদের স্বার্থেই দূরপাল্লার বাস চালুর দাবি শাজাহান খানের
১৪ মে ২০২১ ১৬:৫৮ | আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ২২:০২
ঢাকা: ঈদের পর গ্রাম থেকে যারা ঢাকায় ফিরবেন, তাদের স্বার্থেই দূরপাল্লার বাস চালুর দাবি জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, যেভাবে মানুষ গ্রামে গেছে, সেভাবে তারা আবার ফিরে আসবে। তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না। তাই ফিরে আসা যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে কয়েকদিনের জন্য হলেও দূরপাল্লার পরিবহন চালু করা জরুরি।
শুক্রবার (১৪ মে) সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ভবনের সামনে পূর্ব নির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শাজাহান খান এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহন চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঈদের দিন সকাল ১০ থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘এখন দূরপাল্লার বাস চালু করা জরুরি। কারণ যেভাবে মানুষ গ্রামে গেছে, তারা আবার ফিরে আসবে। তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না। সাত সিটের একটি মাইক্রোবাসে ১০ থেকে ১২ জন লোক গ্রামে যাচ্ছে। ১০ সিটের স্পিডবোটে গিয়ে ২৬ জন লোক মারা গেল। যারা গ্রামে গেছে তারা আবার ফিরে আসবে। তাই দ্রুত দূরপাল্লার বাস চালু করা জরুরি।’
সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সবধরনের নির্দেশনা আমরা পালন করি। সরকারও আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে দেখেন। আমরা বলতে চাই, যখন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়, তখন জেলেদের এক মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবহন যে এক মাস সাতদিন ধরে বন্ধ, এ সময় তো কোনো খাদ্য সহায়তা আমরা পেলাম না। যারা গত বছর পেয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন অনুদান পেয়েছেন।’
যে অনুদান দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘পরিবহন খাতে আমাদের ৬০ থেকে ৭০ লাখ শ্রমিক রয়েছে; কিন্তু তাদের মধ্যে অনুদান পেয়েছে মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ। এটা খুবই সামান্য। আমরা সরকারের কাছে তালিকা দিয়েছি। সেই অনুযায়ী সবাইকে অনুদান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
৫ হাজার কোটি প্রণোদনার দাবি জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের বেতন ভাতা-দেওয়ার জন্য সাত হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। কিন্তু পরিবহনের মতো এত বড় সেক্টরে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। পরিবহন খাতে প্রণোদনা দেওয়া হলে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতো মালিকরা। বর্তমানে বাস বন্ধ থাকায় পরিবহন মালিকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। তাদের ঋণ এমনভাবে বাড়ছে যে, কয়দিন পর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করবে ব্যাংক। এ বিষয়টি দেখতে হবে। তাই আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা চাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ ও ১৫ সালে সরকারবিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিবহন শ্রমিকরা মাঠে ছিল। ওই সময় ৯৩ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেসময় এক হাজারের মতো গাড়ি পুড়িয়ে মালিকদের সম্পদ নষ্ট করা হয়েছিল। ওই সময় প্রণোদনা দিয়েছিলেন এটা আমরা স্বীকার করি। আমরা সরকারের পাশে আছি, আগামীতেও থাকব।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা আপনার সন্তানের মতো। তারা এখন খুব কষ্টে আছেন। তাদের জন্য কি করবেন সেটা আপনিই ভালো জানেন। আমি আশা করব, আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আপনার কাছে যাব। আশা করছি আপনি শ্রমিক-মালিকদের সহায়তা করবেন।’
আজকের কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আলী সুবা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দীন সবুর, সয়দাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনানাল মালিক সমিতির সাবেক সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালেও পরিবহন শ্রমিক ও মালিক নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানা গেছে।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম