নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের ৭৫ কোটি টাকা অনুদান প্রধানমন্ত্রীর
১২ মে ২০২১ ২২:৪৫ | আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ০১:১৭
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যে আর্থিক সংকটে থাকা ১ লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জন নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে ৭৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বুধবার (১২ মে) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী এবং কারিগরি শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে এই অনুদান বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষক ৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাবেন। এজন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে ২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট ৭৪ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এককালীন অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহামারির এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উদ্যোকে স্বাগত জানিয়ে ধন্যবাদ জানানোর পাশপাশি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন নন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা জানি তিনি একজন শিক্ষক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারির মধ্যেও তিনি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার বাবুখালি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের কর্মচারী রানাকুল হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমরা তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে লকডাউনে আয় হারানো, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষকে সহায়তা প্রদান করে তাদের পাশে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারিতে অসহায় মানুষকে সহায়তার অংশ হিসেবে ২ মে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। মহামারির প্রথম পর্যায়েও প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ৩৬ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এবারও তার নির্দেশে সেই সহায়তা দেওয়া হলো।
তার কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ যখন আসে, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে কঠোর লকডাউন শুরু হলে সারাদেশের প্রতিটি এলাকাতেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শ্রমজীবী মানুষ ও প্রান্তিক জনপদের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ৫৯০ কোটি টাকা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করেছে। এই কার্যক্রম এখনও চলছে বলেন জানান সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’কে ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া এই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে আরও ৫ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ তহবিল থেকে দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে আরও ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তার জন্যও প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এছাড়া হাওর এলাকায় ধানকাটা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ থেকে যে সমস্ত শ্রমিক ওইসব এলাকায় ধান কাটতে যান, তাদের সেখানে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ সরকার প্রধান দেন। এছাড়া সারাদেশে শহর এলাকায় নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেঁজুর, পেঁয়াজ সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করেছে টিসিবি। তাতে প্রতিদিন আট লাখ মানুষ উপকার পাচ্ছে। গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে সব মানবিক সহায়তা কার্যক্রমসহ করোনাভাইরাস মোকাবিলার সার্বিক বিষয় তিনি নিয়মিত তদারকি করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা তুলে ধরে বাংলা নববর্ষের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আপনাদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম