খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর
৯ মে ২০২১ ১৬:২২ | আপডেট: ৯ মে ২০২১ ১৬:৩৮
ঢাকা: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (৯ মে) বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য তার পরিবার থেকে একটা অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরা সেই বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে তা পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে তাকে একবার শর্ত সাপেক্ষে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেখানে পুনরায় সুযোগ দেওয়ার আর কোনো অবকাশ নেই। তাই বিদেশ নেওয়ার আবেদনটি আমরা নামঞ্জুর করলাম।
মন্ত্রী বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আইনগতভাবে তাকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যেহেতু আইনে নেই, তাই সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে চায় তার পরিবার ও দল।
এ উদ্দেশ্যে বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে যান খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই ইস্কান্দার মির্জা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো অনুমতি দিতে আবেদন জানান। আবেদনপত্র পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদেরকে আশ্বাস দেন ‘আইনি বিষয়গুলো’ যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবেদনটি বৃহস্পতিবার (৬ মে) আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আইনমন্ত্রী গুলশানের নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা এই আবেদন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দ্রুত যাচাই-বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তবে আজ সব বন্ধ হয়ে গেছে। আজ আর কোনো সুযোগ নেই। আজ এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না।
এরপর গতকাল শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আজ শনিবার এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।
এ বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রীর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি। খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে আজই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, এখনো খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যখন অনুমতি আসবে তখন হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে, গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। চারদিন পর ১৫ এপ্রিল তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেসময় চিকিৎসকরা জানান, সিটি স্ক্যানের জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেই রাতেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে।
পরে ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় নমুনা জমা দেওয়ার পর আবারও করোনা পজিটিভ আসে বিএনপি চেয়ারপারসনের। এরপর ২৭ এপ্রিল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে ফের এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ না হওয়ায় তাকে ভর্তিও করা হয় সে রাতে। সেখানে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেখভাল করছেন।
এর মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার (৩ মে) তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সবশেষ বুধবার রাতে ব্রিফিং করে জানান, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ