করোনায় পোনা মাছ চাষি-বিক্রেতাদের মানবেতর জীবনযাপন
৭ মে ২০২১ ১৬:০৮
বরিশাল: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পোনা মাছের পাইকারি বাজারে ব্যবসায় ধস নেমেছে। এই পেশার সঙ্গে জড়িত শত শত পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখন পর্যন্ত তারা সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় গৈলা ইউনিয়নের দাসের হাটে বরিশাল, যশোর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত পাইকাররা পোনা মাছ কিনতে আসছে। এছাড়া আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার প্রায় চার শতাধিক পরিবার এই বাজার থেকে পোনা মাছ ক্রয় করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। লকডাউনের পূর্বে প্রতিদিন এই বাজারে প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার পোনা মাছ বিক্রি হত। এখন প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। আর ওই চার শতাধিক পরিবার লকডাউনের কারণে মাছের পোনা ক্রয় করে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করতে না পারায় তারা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এই পোনা মাছের বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া, নাইলোনটিকা, কারফু, পাঙ্গাস, চায়না পুঁটি, টাটকিনাসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির বিভিন্ন জাতের মাছ বিক্রি হত। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় পোনা মাছের চাহিদা। উপজেলার মৎস্য ফার্মের মালিক মামুন বেপারি বলেন, এই বাজারটিতে কয়েক বছর ধরে পোনা মাছ বিক্রি হয়ে আসছে। এ বাজারে পোনা মাছ বিক্রির সুনাম দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত বাড়তো ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। কিন্তু এই লকডাউনের কারণে যানবাহন না চলায় পোনা মাছ ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসছে না কেউ। এতে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট পোনা মাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত মনির সরদার, মামুন বেপারি, কবির বেপারি, মিন্টু সরদার, মজিবর সরদারসহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউনে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় দূরের খামারিদের মধ্যে মাছের খাবার, মৎস্যজাত দ্রব্য ও পোনা মাছ সরবরাহে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মৎস্য উৎপাদন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাজারে কমমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে মাছ। তার ওপর মাছের খাবারের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ বহুগুণ বেড়েছে।
দাসের হাট মৎস্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরদার মনোয়ার হোসেন জানান, এই এলাকার শত শত মৎস্য চাষি বিভিন্ন নালা, ডোবা, পুকুরে পোনা মাছের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু লকডাউনে এই ব্যবসায় ধস নেমেছে। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ট্রাক, মিনিট্রাক, নসিমন নিয়ে মাছ ক্রয়ের জন্য আসতো। পরে এগুলো বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করতেন মৎস ব্যবসায়ীরা। দাসের হাট বাজার থেকে স্বল্পমূল্যে পোনা মাছ ক্রয় করে অন্য বাজারে নিয়ে আবার অধিক মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতেন তারা। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় মানুষ অন্য পেশা ছেড়ে এই পেশায় ঝুঁকে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে মাছ চাষি, হ্যাচারি মালিকসহ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাছ ও পোনা বিক্রয় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ও মূলধন ঘাটতির কারণে তারা যাতে প্রণোদনা পেতে পারে সে ব্যাপারে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এনএস
করোনাভাইরাস চাষি-বিক্রেতাদের মানবেতর জীবনযাপন টপ নিউজ পোনা মাছের ব্যবসায় ধস