পেশা ছাড়লেও বেশ ছাড়েননি, বেদে সেজে করেন ইয়াবার কারবার
৫ মে ২০২১ ২১:৫৮ | আপডেট: ৫ মে ২০২১ ২২:০৬
ঢাকা: পূর্বপুরুষরা বেদেই ছিলেন। তবে বাপ-দাদার আমলে বেদে জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরে। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পড়ে লাভের আশায় ফের ভাসমান বেদের ছদ্মবেশ নিয়ে ইয়াবার কারবার শুরু করেন পাঁচ তরুণ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে লাভের আশায় বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে আসেন তারা। ৭৭ হাজার ইয়াবার ওই চালানসহ ওই পাঁচ তরুণ ধরা পড়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) হাতে।
মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালায় র্যাব-২। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই মাদক পাচার চক্রকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার পাঁচ জন হলেন— মো. তারিকুল ইসলাম (২৩), মো. সিনবাদ (২৩), মো. মিম মিয়া (২২), মো. ইমন (১৯) ও মো. মনির (২৮)।
বুধবার (৫ মে) বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার এসব তথ্য জানান।
লে. কর্নেল ইমরান বলেন, র্যাব সদর দফতরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একদল মাদক কারবারি মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে রওনা দেয়। নদী পথে বুড়িগঙ্গা দিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় ইয়াবা হস্তান্তর করতে আসছিল বলে খবর পাই। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জাম, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র্যাক এবং নানা ধরনের ইমিটেশনের অলংকার উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-২ সিও জানান, গ্রেফতার চক্রটি পারস্পরিক যোগসাজশে নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্র পথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করে নিয়ে আসত। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্না করার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা লুকিয়ে তা আবার ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিত। তারা মাদকের চালান কক্সবাজার এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনই মহাসড়ক ব্যবহার করত না।
ইমরান উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি, টেম্পু ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসত। সেখান থেকে তারা নোয়াখালীর-চৌমুহনী-সোনাইমুরী এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসত। দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করত। এতে করে তাদের ৪/৫ দিন অথবা কোনো কোনো সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেত।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, এই দীর্ঘ সময় তারা বেদেদের মতোই জীবনযাপন করত এবং সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনিহারি দ্রব্য যেমন— চুড়ি, কড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, শিশুদের কোমড়ে বাধার ঘণ্টা, চেন, সেফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করত। মাদক পরিবহনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের কৌশলের মুখামুখি এর আগে কখনো হয়নি। তারা মাদক চোরাচালানে যে রুটটি ব্যবহার করছে, তাও একেবারে নতুন বলা চলে।
লকডাউনে নৌ ও সড়ক পথে যানচলাচল বন্ধ থাকলেও তারা ঢাকায় মাদকের চালান নিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা রয়েছে কি না— জানতে চাইলে র্যাব সিও বলেন, তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে নৌপথ বা সড়ক পথ, কোনোটাই ব্যবহার করেনি। একেক এলাকার অবস্থা বুঝে ভেঙে ভেঙে পথ পাড়ি দিয়েছে। এজন্য এই চক্রের সঙ্গে একজন ব্যক্তি গাইড বা লাইন ম্যান হিসেবে কাজ করে থাকেন। নিরাপত্তার বিষয়টি তিনিই ডিল করেন। প্রথাগত পথের বাইরে তাদের এই মাদকের চোরাচালান বন্ধে র্যাবের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানান র্যাব সিও।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর