‘বাবুনগরী-মামুনুলদের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সুযোগ দেওয়া হবে না’
২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৫৭
বগুড়া থেকে: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বাবুনগরী-মামুনুলরা এক নতুন লেবাস নিয়েছে। গতকাল মধ্যরাতে হঠাৎ করে বাবুনগরী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল ঘোষণা করলেন। আবার সেহরির সময় দেখা গেল নতুন কমিটি। জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটি বাতিল হলো- শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। এই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোনো সুযোগ তাদের আর দেওয়া হবে না।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের পর ধান কাটার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চীন থেকে আনা ডিপ ভায়োলেট রঙের হাইব্রিড ও দেশের ডিপ গ্রিন ধানের হাইব্রিড চারা রোপণ করা হয়েছিল। ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান নেওয়ার পর এবার সেই শস্য কাটার উদ্বোধন করা হয়।
ধান কাটা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। উদ্ধোধন ঘোষণা করেন ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। এছাড়া বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সিআইপি। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ।
‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চীন থেকে আনা ডিপ ভায়োলেট রঙের হাইব্রিড ও দেশের ডিপ গ্রিন ধানের হাইব্রিড চারা রোপণ করা হয়। এই শস্যচিত্রের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে এই জমি ইজারা নেওয়া হয়।
ধানের গাছ ছোট অবস্থায় উঁচু থেকে ড্রোন দিয়ে ছবি তোলার পর বঙ্গবন্ধুর অবয়ব ফুটে উঠতে দেখা যায়। ধান চারা যতই বড় হয়েছে ততটাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের আগেই ১৬ মার্চ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘শস্যচিত্র’ হিসেবে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর’ প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান লাভ করে।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন ছিল ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। এর দৈর্ঘ্য চারশ মিটার এবং প্রস্থ ছিল তিনশ মিটার। বিএনসিসি ও কৃষিবিদদের নিপুণ কারুকাজে শস্যচিত্রের বিশাল ক্যানভাসে ফুটে ওঠে বঙ্গবন্ধু। ধানকাটার পর সেগুলোর একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এবং বাকি অংশ কৃষক ও কৃষক সংগঠনের মাঝে শুভেচ্ছা হিসেবে বিতরণ করা হবে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের শুভেচ্ছা ও স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মহিমান্বিত করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে সারাদেশ যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আহ্লাদিত, সেই মুহূর্তে আমরা দেখলাম এই দেশে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অপশক্তিকে, যে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করেছিলাম, তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নির্দেশে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করেছিলাম তার স্বপ্নের একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পরে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তন করে তার নেতৃত্বে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
নানক বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য সেদিন বায়তুল মোকারকম মসদিজদ থেকে মোদি ঠেকাওয়ের নামে যে মিছিল করেছে, ২৭ তারিখে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, হাটহাজারীতে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, সেই বাবুনগরী-মামুনুলরা আজ এক নতুন লেবাস নিয়েছে। গতকাল মধ্যরাতে হঠাৎ করে বাবুনগরী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল ঘোষণা করলেন। সেহরির সময় আবার টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম, বাবুনগরী আবার কমিটি তৈরি করেছেন। যখন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এক একজন করে পদত্যাগ করছিলেন, যখন এক এক করে উইকেট পতন হচ্ছিল, মামুনুল হক যখন সবকিছু এক এক করে স্বীকার করে নিচ্ছেন- তখন বাবুনগরী সাহেব আপনি কমিটি বাতিল করলেন। এই কমিটি বাতিল হলো- শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। এই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোনো সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে, এদেশের প্রতিটি মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা আমাদের মাদরাসাকে কলঙ্কিত করেছে, প্রশ্নবিদ্ধ করেছে- তাদের স্বার্থ রাজনৈতিক মতলব-উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। তাদের আর মাদরাসায় ঢুকতে দেওয়া যায় না।’ মাদরাসাকে যারা কলঙ্কিত করে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদকে যারা কলঙ্কিত করে, তাদের সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
নানক বলেন, ‘সরকার যখন করোনা মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, তখন মির্জা ফখরুল সাহেব বলেন, লকডাউন তো কোভিড মোকাবিলার জন্য নয়, লকডাউন হলো বিরোধীদলকে শাসন করার জন্য, বিরোধীদলকে দমানোর জন্য।’ তিনি মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি পাগলের প্রলাপ বকছেন। সবকিছু হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছেন। এই পাগলের প্রলাপ আর বাংলার মানুষ আর গ্রহণ করে না।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
জাহাঙ্গীর কবির নানক টপ নিউজ মামুনুল-বাবুনগরী শাক দিয়ে মাছ ঢাকা