Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে করোনায় মরা অনেক ভাল’

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ এপ্রিল ২০২১ ০৯:৩২ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ১২:৫৭

সুনামগঞ্জ: সারাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে দ্বিতীয় বারের মত আবারও ‘লকডাউন’ বাড়ায় খেটে খাওয়া মানুষের মাথায় হাত। না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে করোনায় মরে যাওয়া অনেক ভাল বলে মনে করেন শহরের রিকশা চালক সোহেল মিয়া।

তিনি বলেন, ছেলে মেয়ের মুখের দিকে থাকতে পারি না, তাদের ঠিকমত তিন বেলা খেতে দিতে পারি না। ছোট একটা ১০ মাসের ছেলে আছে, আজকে তার খাওয়ার জন্য দুধ লাগবে। যেকোনো মূল্য সেই দুধের টাকা রোজগার করতে হবে। কিন্তু পুলিশ মূল সড়ক দিয়ে রিকশা চালাতে দেয় না। মূল সড়কে রিকশা নিয়ে গেলেই পুলিশ গালাগালি করে, মারধর করে এবং রিকশার হওয়া ছেড়ে দেয়। তবে আজকে যেকোনো মূল্যে আমার ১০ মাসের শিশুর জন্য দুধ কিনার টাকা রোজগার করতেই হবে।

বিজ্ঞাপন

শুধু সোহেল মিয়া নয় এমন শত শত রিকশা চালকের মুখের দিকে থাকানো যাচ্ছে না। দুই চোখ পানি টলমল করছে, অনেকে আবার কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেলেছেন।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, আলফাত স্কয়ার পয়েন্ট, কালী বাড়ী পয়েন্ট, থানা পয়েন্ট, উকিল পাড়া পয়েন্ট, কাজীর পয়েন্ট, নবী নগর পয়েন্ট, হালুয়াঘাট পয়েন্ট, বক পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে রিস্কার সিটের ওপর বসে আছেন চালকরা। কিন্তু সরকারি, বেসরকারি এবং বিনা প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় তারা এখন পর্যন্ত কোনো টাকাই রোজগার করতে পারেননি। রিকশা ভাড়া ৬০ টাকা কোথায় থেকে দিবেন, বাড়িতে চাল, ডাল কোথায় থেকে কিনে নিয়ে যাবেন— তা নিয়ে চিন্তিত চালকরা।

রিকশা চালক রনি মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, করোনার মহামারির মধ্যে জীবিকা নির্বাহের জন্য শহরে রিকশা নিয়ে আসা লাগে। কারণ বাসা থেকে বের না হলে ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে থাকবে। কিভাবে চাল, ডাল কিনে বাসায় নিয়ে যাব সেটা নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তায় থাকতে হয়। তারপরও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যাই রোজগার করতে পারি, তাই দিয়ে কোনো রকমের সংসারটা চলছে।

বিজ্ঞাপন

রিকশা চালক মোজাফর মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ৮টার সময় রিকশা নিয়ে বের হই। কিন্তু বাসা থেকে বের হলেই পুলিশ রিকশার বসার সিট নিয়ে যায়। অনেক সময় মারধর করে, চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। এখন আমরা গরিব কিভাবে বাঁচব বলতে পারেন? লকডাউনে ঘরে বসে না খেয়ে থাকার চেয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল।

রিকশা চালক দিলু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আজকে অনেকদিন ছেলে-মেয়েদের ভাল কিছু খেতে দিতে পারি না। এখন পর্যন্ত শুধু ডাল আর ভাত কোনো রকমে মুখে তুলে দিচ্ছি। আজকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়ে বলে দিয়েছে বাবা মাছ নিয়ে এসো। এখন পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ৬০ টাকাই রোজগার করতে পারলাম না। মাছ কি করে বাসায় নিয়ে যাব?

রিকশা চালক বাবুল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, যদি মাস্ক লাগিয়ে আমাদের দু’জন যাত্রী নিয়ে শহরে পুলিশের হয়রানির মুক্ত রিকশা চালানোর অনুমতি দিত তাহলে হয়তো আমরা গরিবরা বাঁচতে পারতাম।

সারাবাংলা/এনএস

করোনাভাইরাস রিকশা চালক লকডাউন সুনামগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর