Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়কে ‘নামমাত্র’ লকডাউন, গলিতে সব স্বাভাবিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২১ ০০:০৪ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ ০০:০৭

ঢাকা: দ্বিতীয় দফা লকডাউনের চতুর্থ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, আবাসিক এলাকা ও গলি ঘুরে দেখা যায় লকডাউন আছে নামমাত্র। বিশেষ করে বিভিন্ন সড়কের মোড়, আশপাশ ও গলির প্রবেশমুখে মানুষের রীতিমতো ভিড় দেখা গেছে।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর সড়কে কিছুসংখ্যক রিক্সা ও ছোট ছোট যানবাহন চলতে দেখা গেছে। বেলা গড়িয়ে দুপুরের পর থেকে মিরপুর সড়ক, আদাবর, মোহাম্মদপুর, কৃষিবাজার এলাকার বিভিন্ন সড়কে প্রচুর রিক্সা-মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। আর প্রাইভেটকার, মালবাহী ভ্যান, চলাচল করতেও দেখা দেখা।

বিজ্ঞাপন

দুপুরের পর থেকে মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোড়, হুমায়ূন রোড, কৃষিবাজার এলাকা, ইকবাল রোড, স্যার সৈয়দ লেনে অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতোই মানুষের চলাফেরা ছিল।

এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য মানুষের লম্বা সারি দেখা গেছে। দুপুরে মিরপুর রোডের শ্যামলীতে টিসিবির পণ কেনার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি চোখে পড়ে। এ সময় কিছু কিছু মানুষকে মাস্ক পড়তে দেখা গেলেও কাউকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি।

মাস্ক ছাড়া লম্বা লাইনে দাঁড়ানো আব্দুল আলিম বলেন, ‘মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে এসেছি।’ পাশে দাঁড়ানো পেশায় দিনমজুর রফিক নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাস্ক পড়লেই কি অইব, না পড়লেই কি অইব, যা হবার তা এমনিতেই অইব।’

বিকেলে মোহাম্মদপুরের শাজাহান সড়কে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল বিক্রি করতে দেখা যায়। ৩০ টাকা কেজি দরে চালের জন্য নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। মাঝে মধ্যে কারও মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ লোকের মুখে মাস্ক নেই। লাইনে একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন। চাল কিনতে আসা কয়েকজনকে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল কিনেছেন সালমা নামের এক গৃহশ্রমিক। জিজ্ঞেস করলে সালমা বলেন, ‘আমি বাসায় বাসায় কাজ করি। আমার তিন ছেলে মেয়ে। স্বামী রিক্সা চালাইতো। এখন কামাই কইম্যা গেছে। এহানে চাল কিনতে আইছিলাম।’

চাল দেখিয়ে সালমা বলেন, ‘৩০ টাকা কেজি করে ৫ কেজি চাল কিনছি। দোকান থেইক্যা ৬০-৬৫ টাকা কইরা চাল কিনন্যা খাইতে অয়। এহনতো আমরা দুজনেরই কাম-কাজ কইম্যা গেছে। কি আর করুম কোনো রহমে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাঁচতে তো অইবো।’

এমন সময় হর্ন বাজিয়ে পুলিশের গাড়ি আসতে দেখা যায়। তখন গাড়ি থেকে মাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হলে লোকজন তাড়াহুড়া করে একটু ফাঁকা করে দাঁড়াতে দেখা যায়। সড়কের পাশে খোলা থাকা বিভিন্ন দোকানপাট দ্রুত বন্ধ করতেও দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোড, হুমায়ুন রোড়, স্যার সৈয়দ লেন, ইকবাল রোডের সর্বত্রই মানুষকে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে দেখা গেছে। তা দেখে দেশে লকডাউন চলছে তা বোঝার কোনো উপায় নেই! আবার মূল সড়কের কিছু কিছু জায়গায় পুলিশের পাহারা চোখে পড়লেও মানুষের চলাফেরা ছিল অন্যান্য সময়ের মতোই স্বাভাবিক।

এরপর সেখান থেকে মিরপুর রোড়ের শুক্রাবাদ এলাাকায় গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। শুক্রাবাদের গলির প্রবেশমুখে ছোট ছোট হকারের হাঁকডাক শোনা যায়। গলির ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা সব দোকানপাট খোলা। মানুষের চলাচল ও কেনাকাটা চলছে অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতোই। গলির ভেতরে কাঁচাবাজারে গিয়েও দেখা যায় মানুষের ভিড়।

রাস্তার পাশে খাঁচায় রেখে মুরগি বিক্রি করছেন আইনাল নামের এক বেপারি। মাস্ক ছাড়া কেন এভাবে রাস্তার পাশে বসে মুরগি বিক্রি করছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে বলেন, ‘না মাস্ক পড়ি না। মাস (মাস্ক) পড়তে ভালা লাগে না। পুলিশ আইলেই পইড়া ফালাই।’ বেচা-বিক্রি কেমন চলছে জিজ্ঞেস করলে ৫ সন্তানের জনক আইনাল বেপারি বলেন, ‘বেচাবিক্রি মোটামুটি চলতাছে। আগের চেয়ে কিছু কইম্যা গেছে। তবে খারাপ না।’

গলির ভেতর দিয়ে মসজিদের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়া কয়েকজন যুবক বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছে। মাস্ক কোথায় জিজ্ঞস করলে, ‘এক যুবক উত্তর দেয়, মাস্ক পড়লে কি হবে? মাস্ক না পড়লেও চলে। কোনো সমস্যা নাই।’

ওই গলি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কলাবাগানের লেক সার্কাস রোড ও কলাবাগান ২য় লেনের গুলির মুখেও যথারীতি লোকজনের ভিড় দেখা যায়। আর গলির ভেতরে সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল।

বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সিগনালে গাড়ির চাপ সামলাতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। এ সময় ট্রাফিক সার্জনকে বেশ কয়েকটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিতেও দেখা যায়।

এরপর ইফতারের আগে কলাবাগানের ঐতিহ্যবাহী মামা হালিমের দোকানের সামনে গিয়ে প্রচুর ভিড় দেখা যায়। কাছে গিয়ে জানা যায়, ইফতারের অনেক আগেই সবকিছু বিক্রি হয়ে গেছে। এ সময় এক কর্মচারীকে বলতে শোনা যায়, আজ টিভিতে তাদের দোকান দেখিয়েছে, তাই দোকানে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এজন্য ইফতারের অনেক আগেই সব বিক্রি হয়ে গেছে।

লকডাউনে আজ রাজধানীর অন্য এলাকার চিত্রও একইরকম ছিল বলে জানা গেছে। এর ফলে করোনা মোকাবিলায় সরকারের বেঁধে দেওয়া কঠোর লকডাউন মানুষ কতটুকু মেনে চলছে, সে বিষয়টিই এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

এর আগে, গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রথমে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও

করোনাভাইরাস টপ নিউজ নামমাত্র লকডাউন সর্বাত্মক লকডাউন

বিজ্ঞাপন

শেষ কবে এতটা নিচে ছিলেন কোহলি?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৪

মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব খান
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর