হাসপাতাল উধাও হওয়ার খবরটি ভুল: স্বাস্থ্য অধিদফতর
১৪ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৭
ঢাকা: গত বছর দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের পরে রোগীদের আইসোলেশন সুবিধা দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হয়। ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হাসপাতালটি উধাও হয়ে গেছে সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, কোনো হাসপাতাল উধাও হয়নি। এ বিষয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সেটি ভুল।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার উধাও করে দেওয়া হয়েছে- এমন সংবাদের ‘উধাও’ শব্দের মধ্যে একটা ‘অপমানজনক’ ব্যাখ্যা আছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
সংবাদটি বিষয়ে অধ্যাপক ডা. খুরশীদ বলেন, সংবাদটিতে সংবাদকর্মী কী বোঝাতে চেয়েছেন তা উনি নিজেই জানেন না। আমরা বলেছি বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি করা হয়েছিল সেই অবস্থা পরবর্তীতে ছিল না। সেখানে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ছিল, বিছানা ছিল। সেগুলো সারাদেশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। একটি টিস্যু পেপার বক্স কোথায় দেওয়া হয়েছে, আমাদের কাছে সেই তালিকাও আছে। আপনারা চাইলে সেগুলো নিতে পারেন।
ফিল্ড হাসপাতালের বিষয়ে অধ্যাপক খুরশীদ বলেন, ওই আইসোলেশন সেন্টারে প্রতিদিন ৬০ লাখ টাকা খরচ হত। কিন্তু সেখানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি রোগী থাকত না। হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন ৪০০ থেকে ৪৫০ জন। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মীসহ হাজারের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে কর্মরত ছিল। রোগী কম থাকায় হাসপাতালের ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমন অবস্থায় আমরা বাধ্য হয়েই হাসপাতালটি বন্ধ করে দিয়েছি।
অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ডিএনসিসির করোনা হাসপাতাল নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সমালোচনা করা হয়েছে। কোনোরকম খোঁজ না নিয়েই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আমরা আগের স্থাপনা ব্যবহার না করে নতুন স্থাপনা ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের অর্থ ব্যয় করছি। কিন্তু আপনারা জেনে থাকবেন যে আগের যে স্থাপনা (ডিএনসিসির আইসোলেশন সেন্টার) সেখানে আমাদের ২০০ শয্যার আইসিইউ রয়েছে। নতুন করে ৯ তলায় আমরা আরও ৯৫০ শয্যা দিয়েছি। প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে এ হাসপাতালে দু্ইশসহ আরও ৯৫০ শয্যার যে হাসপাতাল তৈরি হয়েছে এটা কি আগের স্থাপনায় ব্যবস্থা করা যেত?
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে আমাদের চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় কিছু কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা আমাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারিতে সাংবাদিকদের আমরা শুরু থেকেই সহযোদ্ধা হিসেবে দেখেছি। তারাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এই সময়েও কিছু কিছু মিডিয়া সমালোচনার মাধ্যমে আমাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। আমরা যদি ভুল করে থাকি তাহলে সমালোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে কেউ যদি না জেনে, না বুঝে, বিস্তারিত খোঁজ না নিয়ে সমালোচনার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তাহলে আমরা ঠিক থাকতে পারি না।
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এ অবস্থায় মানুষকে বিভ্রান্ত না করে, আমাদের মনোবল না ভেঙে, আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় কাজ করছি। আমাদের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তারপরও আমাদের ভুল হতেই পারে। সেটা আমাদের ধরিয়ে দিলে আমরা শুধরে নিতে পারব। কিন্তু এ অবস্থায় সমালোচনা না করে সকলের আমাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এবং এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ