Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন বছরের শপথ হোক— জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১৯ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৯

ঢাকা: পুরনো বছরের জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে ফেলে নতুন বছরে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, অতীতের সব জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করব। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাব সামনের দিকে। গড়ব আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত। এই হোক এবারের নতুন বছরের শপথ।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বঙ্গাব্দ ১৪২৮ শুরুর প্রাক্কালে বঙ্গাব্দ ১৪২৭-এর শেষ দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি দেশে ও প্রবাসে যে যেখানেই আছেন, সবাইকে বাংলা নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, “আজ আবাহনের দিন। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’— কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী এই গান গেয়ে আজ আমরা আবাহন করব নতুন বছরকে।”

দেশের আকাশে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ায় এসময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদও জানান শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত বছরও মানুষের পহেলা বৈশাখ কেটেছে ঘরে। এ বছরও একই পরিস্থিতিই বিদ্যমান রয়েছে। এ বিষয়টি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে সময় চলে যায়। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই আমরা একবছরের বেশি সময় পার করলাম। গত বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহের দিকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। নানা আশঙ্কা আর আতঙ্ক গ্রাস করেছিল আমাদের। সেসব মোকাবিলা করেই আমাদের টিকে থাকতে হয়েছে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের থাবায় আমরা হারিয়েছি আমাদের অনেক প্রিয়জনকে, আপনজনকে। এসময় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে মৃত সবার রুহের মাগরিফরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুসঙ্গ। ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের। গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারাবছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র কিনে রাখতেন। বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমতো উন্নতমানের খাবারের।

পহেলা বৈশাখের আয়োজনে বর্ষবরণের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ষাটের দশকের শেষ ভাগে ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। আশির দশকে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। মূলত আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনসমূহের কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই আজকের এই অবাহন। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের সকল সংকীর্ণতা, কুপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই সাজাত্যবোধ ও বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।

বিজ্ঞাপন

‘আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি জনগোষ্ঠী বসবাস করেন, সেখানেই বাঙালির হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। আর পৃথিবীজুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধ,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও আমরা বাইরে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারছি না। কারণ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারাদেশে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাভাইরাস আরও মরণঘাতী হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আনন্দ তাই গত বছরের মতো এবারও ঘরে বসেই উপভোগ করব আমরা। টেলিভিশন চ্যানেলসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সেসব অনুষ্ঠান উপভোগ ছাড়াও আমরা নিজেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে পারি।

নতুন বছরের প্রত্যয় জানিয়ে কবিগুরুর ভাষায় প্রধানমন্ত্রী বলেন

নিশি অবসান, ওই পুরাতন
বর্ষ হলো গত
আমি আজ ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত।
বন্ধু হও, শত্র হও, যেখানে যে কেহ রও
ক্ষমা করা আজিকার মতো
পুরাতনের বছরের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

টপ নিউজ পহেলা বৈশাখ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর