ভারতে বাড়ছে সংক্রমণ, মৃত্যু; বড় শহর ছাড়ছেন শ্রমিকরা
৯ এপ্রিল ২০২১ ২৩:০০
ভারতে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ এবং করোনায় মৃত্যু। শুক্রবারও (৯ এপ্রিল) দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ডের পাশাপাশি পাঁচ মাসের মধ্যে শুক্রবার সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউন আতংকে বড় বড় শহর ছাড়তে শুরু করেছেন অন্য রাজ্য থেকে কাজ করতে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা। খবর রয়টার্স।
এর আগের দফায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় আরোপিত লকডাউনের মধ্যে হাজার হাজার শ্রমিককে পায়ে হেঁটে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে দেখা গেছে। লকডাউনে পরিবহনসহ সকল সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা মানবেতর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ক্লান্তিতে রাস্তায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়।
এদিকে, ভারতে মার্চ থেকে ফের করোনা সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করেছে; বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে। সংক্রমণ মোকাবিলায় মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে এরইমধ্যে বার, শপিংমল এবং রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ যে দ্রুতগতিসম্পন্ন সেটা এরইমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরে প্রথম ঢেউ চূড়ায় উঠেছিল। সে সময় দৈনিক গড়ে লাখ ছুঁই ছুঁই সংক্রমণ শনাক্ত হতো। কিন্তু এবার এরই মধ্যে দৈনিক শনাক্ত লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ভারতে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৬৮ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়। মারা গেছেন ৭৮০ জন। মৃত্যুর এ সংখ্যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। শনাক্ত এবং মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রেই মহারাষ্ট্র অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
ভারতে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক কোটি ৩৬ লাখের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর যা সর্বোচ্চ। আর করোনায় মোট মৃত্যু এক লাখ ৬৭ হাজার ৬৪২ জন।
অথচ জানুয়ারি মাসে ভারতে দৈনিক শনাক্ত ২০ হাজারের নিচে নেমে এসেছিল। ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে ভ্যাকসিন কার্যক্রমও শুরু হয়। ফলে এই মহামারির শেষ দেখার অপেক্ষায় ছিল দেশটির নাগরিকরা।
কিন্তু সংক্রমণ কমতে শুরু করলে লোকজন আবার স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা শুরু করে। জোরেশোরে নানা উৎসব আয়োজন শুরু হয়। লোকজনের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এমনকি তারা মাস্ক পরতে এবং দূরত্ব বজায় রাখতেও অনীহা দেখায়। পাঁচ রাজ্যে শুরু হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচার ও ভোট।
যার ফল হাতে হাতে পেতে শুরু করেছে ভারত। মার্চের শুরুতেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে, যা এখন লাগামহীন গতি পেয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতের হাতে পূর্ণগতিতে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত মজুত নেই বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন অবশ্য ভ্যাকসিন সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বলেছেন, এখনো ভারতের হাতে চার কোটি ৩০ লাখের বেশি ডোজ ভ্যাকসিন মজুত আছে বা পাইপলাইনে আছে। তবে রাজ্য সরকারগুলো স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেনি। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ক্ষমতায় নেই সেইসব রাজ্যের সরকার থেকে বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন কার্যক্রম পূর্ণগতিতে চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন কেন্দ্র থেকে তাদের দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তাদের ভ্যাকসিন রেশনিং করতে হচ্ছে।
ভারতে প্রতিদিন ৪০ লাখ মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনো দেশটিতে সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ৪৫ বছরের উপরে যাদের বয়স কেবল তারাই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন।
ভারতের প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আইএনসি) শীর্ষনেতা রাহুল গান্ধী ভ্যাকসিন সংকটের জন্য মোদি সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, সরকার নিজের দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের দিকে মনযোগ না দিয়ে কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রফতানি করেছে।
সারাবাংলা/একেএম
করোনা সংক্রমণ করোনায় মৃত্যু কোভিড-১৯ টপ নিউজ নভেল করোনাভাইরাস ভারত