Monday 13 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকারের উদাসীনতায় করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৩৯ | আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২১ ২২:১৯

ফাইল ছবি

ঢাকা: সরকারের একগুয়েমি ও উদাসীনতায় নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত ‍উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সংকুল পথে নিয়ে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা শনাক্ত এবং মহামারি আকারে সংক্রমণের পর সারাবিশ্বের জনবান্ধব রাষ্ট্রগুলো যখন সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে; বাংলাদেশ সরকার তখন স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে বলে— ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে দেশে করোনা কিছু করতে পারবে না।”

‘এসব উন্মাদীয় বক্তব্য দিয়ে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে এবং করোনা মোকাবিলায় বিন্দুমাত্র উদ্যোগ গ্রহণ না করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত থাকে,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

করোনা মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও প্রস্তাব রাখছি— এখনো সময়ে আছে, করোনা মোকাবিলায় সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে জনগণকে সম্পৃক্ত করুন। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। একটা কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে রাজনৈতিক দল, সংগঠন থেকে ব্যক্তি— সব স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই যে ব্যধি, এই ব্যধির যে ভয়াবহতা সে সম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে এই যুদ্ধের সঙ্গে। আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেই। মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষের জীবন রক্ষা করা। আমরা সরকারকে আহ্বান করব, প্রতিটি ইনফরম্যাল সেক্টারের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদের যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দিতে হবে। এই ইনফরম্যাল সেক্টরে যারা কাজ করছেন, বিভিন্ন দোকান বা শিল্প কলকারখানায় শ্রমিক রয়েছেন, তাদেরও ভাতা দিতে হবে। যতদিন এই সমস্যা থাকবে, বিশেষ করে লকডাউন থাকবে, ততদিন তাদের ভাতা দিতে হবে। বিশেষ করে যারা একেবারে দিন আনে দিন খায় মানুষ, তাদের ব্যাপক হারে ত্রাণ সামগ্রী দিতে হবে তাদের বেঁচে থাকার জন্য, টিকে থাকার জন্য।’

সব মানুষের জন্য করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশকে যদি হার্ড ইমিউনিটির মধ্যে আনতে হয়, তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এখন চীন ও রাশিয়া থেকে তারা ভ্যাকসিন আনার কথা ভাবছে। একবছর আগে এটা ভাবলেন না কেন? একবছর ব্যস্ত থাকলেন বর্ষ উদযাপনের জন্য, মেগা প্রজেক্ট, ডেভেলমেন্ট প্রজেক্ট— সেগুলো নিয়ে।’

‘আমরা প্রস্তাব রাখতে চাই— মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করার জন্য সাড়ে ১২ কোটি টিকা সংগ্রহ করতে হবে। এই টিকা সংগ্রহ করার জন্য সরকারের উচিত হবে এখনই এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেওয়া, রোডম্যাপ তৈরি করা ভ্যাকসিন কীভাবে আসবে, কীভাবে বিতরণ হবে, কীভাবে যাবে জনগণের কাছে?,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বাত্মক লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দেখছি, সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সেটা ক্যারিআউট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ তারিখ থেকে সর্বাত্মক লকডাউন করা হবে। আমরা জানি না সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থটা কী, জনগণও জানে না। তার জন্য বিকল্প কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও জনগণ জানে না। সর্বাত্মক লকডাউন রোজার সময়ে কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে সম্পর্কে কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দুযোর্গে বিএনপি সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। আমরা গতবছরও যথাসাধ্য সম্পদ নিয়ে সাধারণ মানুষজন ও করোনা আক্রান্তদের যে সেবা দেওয়া দরকার, সেটা দিয়েছি। এবারেও আমরা সব ইউনিটকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন আক্রান্ত ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ফরিদপুরে সালথায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সাধারণ মানুষজনসহ বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ঘটনা সরকারের হীন চক্রান্ত ও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। এহেন সরকারি তৎপরতার নিন্দা জানাচ্ছি।’

বিভিন্ন থানায় ভারী অস্ত্রের পাহারার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘হাস্যকর নাটক সাজিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে বসানো হয়েছে মেশিনগান পোস্ট। সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি ১৯৭৪ সালে, ২০১৩-১৪-১৫ সালে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, বিএনপি সহিংসতায় বিশ্বাস করে না এবং জনগণের বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবসময় সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি। বিএনপির ২০০৯ সাল থেকে এই অবৈধ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করছে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজ বন্দি অবস্থায় আছেন। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

করোনা কোভিড-১৯ টপ নিউজ নভেল করোনাভাইরাস বিএনপি

বিজ্ঞাপন

লজ্জার হারে বিধ্বস্ত আনচেলত্তি
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:১০

আরো

সম্পর্কিত খবর