৫ দশকে এমন খরা দেখেনি তাইওয়ান, সংকটে সেমিকন্ডাক্টর খাত
৯ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৫৪ | আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২১ ২২:২০
সান মুন লেক। তাইওয়ানের আইকনিক একটি হ্রদ। সেখানে বেড়াতে গিয়েই নিজের মোবাইল হারিয়ে ফেলেছিলেন চেন। একবছর পর সেই মোবাইল ফিরে পেয়েছেন তিনি! হ্রদের নিচে কাঁদামাটির মধ্যে আটকে গিয়েছিল। সেখান থেকে তবে একবছর পর কিভাবে নিজের মোবাইলটি ফেরত পেলেন চেন?
চেনের জন্য মোবাইল ফোন ফিরে পাওয়ার অনুভূতি সুখকর হলেও এর পেছনের কারণটি তাইওয়ানের জন্য সুখকর নয়। কেননা, দেশটিতে এ বছর এমন খরা দেখা দিয়েছে যে ওই সান মুন লেকের প্রায় পুরোটাই শুকিয়ে গেছে। আর সে কারণেই ওই শুকিয়ে যাওয়া হ্রদটির তলদেশ থেকে উদ্ধার করা গেছে চেনের মোবাইল। এমন খরা দেশটিতে গত পাঁচ-ছয় দশকে আর কখনো দেখা যায়নি। আর এমন তীব্র খরার কারণে সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে তাইওয়ান তথা বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাত।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, বছরখানেক আগে সান মুন লেকে নৌকা গিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন চেন। তখনই হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল তার মোবাইল। তার কথা চেন ভুলেই গিয়েছিলেন। তবে গত সপ্তাহে একজন তাকে ফোন করে জানায়, তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটি খুঁজে পাওয়া গেছে। হ্রদের তলদেশে কাদামাটির মধ্যে ছিল এটি।
চেন জানিয়েছেন, এ খবর পাওয়ার পর উত্তেজনায় রাতে ঘুমাতে পারেননি তিনি। পরদিন ফোনটি নিয়ে আসেন। তাকে অবাক করে দিয়ে ফোনটি সচলও হয়ে ওঠে! চেন জানান, ওয়াটারপ্রুফ কাভার ব্যবহার করার কারণেই সম্ভবত ফোনটি ফের সচল করা গেছে।
চেন নিজের মোবাইল ফিরে পেয়ে খুশি হলেও তাইওয়ানের চলমান খরা দেশটির জন্য এক সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে দেশটির নাগরিকদের পানি ব্যবহারে ‘র্যাশনিং’ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ কেবল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একেকজন পানি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গত পাঁচ থেকে ছয় দশকের মধ্যে এমন তীব্র খরা তাইওয়ানে দেখা যায়নি। এ বছরের খরায় শুকাতে শুকাতে সান মুন লেকের পানির স্তর যতটা নিচে নেমে গেছে, এমনটি দেখা যায়নি গত ৫০/৬০ বছরে।
সান মুন লেক তাইওয়ানের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। স্থানীয়দের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই লেকের এখনকার ছবি পোস্ট করছেন। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লেকের তলদেশের বড় একটি অংশই একেবারে শুকিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তলদেশের কাদামাটির স্তরটির কোথাও কোথাও রীতিমতো ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে।
ওই সান মুন লেকেরই তলদেশের অন্য অংশের অবশ্য ভিন্ন রূপ। সেখানে তলদেশের মাটির বুকে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি-আগাছা। তাতে করে লেকের তলদেশের এই অংশকে ঘাসের গালিচা বলেও ভুল হতে পারে।
কেবল সান মুন লেক নয়, খরার তীব্র প্রভাব পড়েছে তাইওয়ানের অন্যান্য লেক ও নদীর ওপরও। সিনচু কাউন্টিতে অবস্থিত দেশটির অন্যতম বড় শিল্প এলাকা সিনচু সায়েন্স পার্ক। এখানকার পানির প্রধান উৎস তোকিয়ান নদী। সেই নদীর পানিও শুকিয়ে গেছে। বেশিরভাগ স্থানেই নদীর তলদেশ উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। তার ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তাইওয়ানের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, দেশটির এমন খরা পরিস্থিতি তারা আগেই অনুমান করতে পারছিলেন। কেননা গত বছর দেশটিতে একটি টাইফুনও আঘাত হানেনি। মূলত টাইফুনগুলোই দেশটিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে। বছরে একবারও টাইফুন না হওয়ার ঘটনা গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে তাইওয়ানে এই প্রথম।
এমন অবস্থায় তাইচুং, মিয়াওলির মতো শহর ও নর্দার্ন চ্যাংহুয়ার মতো কাউন্টিগুলোতে বসবাসরত লাখ লাখ মানুষকে এই পানির সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে বেশি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে র্যাশনিং করতে হচ্ছে পানি। আর এক্ষেত্রে নানা ধরনের বিধিনিষেধও থাকছে। বলা হচ্ছে, র্যাশনিং চলমান সময়ে সেলুনে কাউকে চুলে শ্যাম্পু করানো যাবে না, পেট্রোল স্টেশনে গাড়ি ওয়াশের কাজও করানো যাবে না।
বৈশ্বিক আইটি খাতে প্রড়বে নেতিবাচক প্রভাব
পানির এই সংকটের কারণে ভুগতে হচ্ছে তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর খাতকেও। কারণ সেমিকন্ডার শিল্প কারখানাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। সিনচু সায়েন্স পার্ক দেশটির সেমিকন্ডাক্টর পণ্য উৎপাদনের সবচেয়ে বড় শিল্প পার্ক। তোকিয়ান নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখানকার উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাইওয়ানের সেমিকন্ডার খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়া গোটা বিশ্বের জন্যই দুঃসংবাদ। কেননা স্মার্টফোন থেকে কম্পিউটারের মতো প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পণ্যের মূল চালিকাশক্তিই এই সেমিকন্ডাক্টর। আর তাইওয়ানের সেমিকন্ডারক্টর খাত গোটা বিশ্বের সেমিকন্ডার যন্ত্রাংশের চাহিদার বড় একটি পূরণ করে। ফলে তাইওয়ানের খরায় দেশটির সেমিকন্ডার খাতের উৎপাদন কমে গেলে তা গোটা বিশ্বের সেমিকন্ডার পণ্য ও যন্ত্রাংশের সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।
সারাবাংলা/টিআর