সরকারি নির্দেশনা মানতে অনীহা
৭ এপ্রিল ২০২১ ২৩:০৪
ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতর শুরু থেকেই বলে আসছে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে হবে। না হলে করোনা সংক্রমণের হার ঠেকানো সম্ভব হবে না। গতবছর সরকারি নির্দেশনা প্রায় পুরোপুরি মানার ফলে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ৫ ভাগের নিচে নেমেছিল।
চলতি বছর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে স্বাস্থ্য বিধি না মানায় করোনার সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। শনাক্তের ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড হতে থাকে। মৃত্যুর দিক থেকেও গতবারের চেয়ে নতুন রেকর্ড হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারাদেশে ৭ দিনের বিধি-নিষেধ আরোপ করে।
এরপরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা অনীহা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। মাস্ক পরতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মাস্ক পড়ার প্রবণতা কিছুটা বাড়লেও এখনও বেশির ভাগ লোকেরই মুখে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকের মুখে নয় থুতনিতে রয়েছে মাস্ক। মাস্ক ব্যতীত অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি মানতেও রয়েছে মতো পার্থক্য।
২০২০ সালের করোনার দিনগুলোতে মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন এ বছর ঠিক ততটা নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফরসহ সরকারি বিধি নিষেধ বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।
বুধবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলামোটর, মতিঝিল, মগবাজার, শান্তিনগর, বিজয় স্মরণি, বাড্ডা, কাকরাইল, নয়া পল্টন এলাকা ঘুরে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা গেছে।
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, মাস্ক ব্যবহারে অনীহার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি স্বল্প শিক্ষিত ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের মধ্যে। এরা কোনো নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা করছে না। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সিএনজিচালকদের কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও থুতনির নিচে রয়েছে। মাস্ক ব্যবহারেই এদের অনীহা আর স্বাস্থ্যবিধির অন্যান্য নিয়ম মানবেন কী করে।
জানতে চাইলে মতিঝিলের একজন সিএনজিচালক দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের করোনা হবে না। সরকার বলেছে মাস্ক পড়তে, তাই সাথে রাখি। আমাদের মাস্ক পরিধান করলেই আর না করলেই কি? আমরা দিন আনি দিন খাই। পেটের দায়ে বের হতে হয়।’
শান্তিনগর মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল এক ব্যবসায়ীর। তার থুতনিতে ছিল মাস্ক। জানতে চাইতেই মাস্ক মুখে দিয়ে বলেন, ‘আমি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলব না। এদের কারণেই আজ ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। তাদের লেখালেখির কারণে সরকার সব বন্ধ করে দিয়েছে। করোনা তো বড় লোকদের রোগ। এটা শ্রমিক বা নিম্ন শ্রেণির মানুষের জন্য নয়।’
রাজধানীর বাংলামোটরে সিগনালে মাস্কবিহীন ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন একজন প্যান্টপরা ভদ্রলোক। কেন মাস্ক পরেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মাস্ক কেনার টাকা নেই।’
ভ্রাম্যমাণ আদালত ধরলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ধরবে সে মাস্ক কিনে দেবে। জরিমানা করলে কী হবে? আমার কাছে তো টাকা নেই। যা হওয়ার হবে।’
বিজয় সরণিতে কথা হয় ট্রাফিক কনস্টেবল জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানছে না স্বল্প শিক্ষিত ও শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা। অনেক ব্যবসায়ীও মানছে না। বাসে অনেককে দেখা যায় মাস্ক ব্যবহারে অনীহা। বলতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে বাক বিতন্ডাও হয়েছে। করোনা বৃদ্ধির মুলে আমরাই দায়ী। ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মানলে আজকের এ অবস্থা হতো না।’
শাহবাগে দেখা যায়, গণপরিবহন বাসে যাত্রী ওঠা নামার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অনেকের মুখে মাস্ক না থাকলেও হেলপার তাকে নির্ধিধায় উঠতে দিচ্ছেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে বাসে ওঠানোর কথা থাকলেও তা ছিল উপেক্ষিত।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিরেরফতর অধ্যাপক হাফিজা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যারা টিকা নিয়েছে আর যারা নেননি প্রত্যেকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। মাস্ক ব্যবহার করা, ২০ সেকেন্ডে ধরে কিছু সময় পরপর হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজ ব্যবহার করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্বতঃস্ফুর্তভাবে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে আরও কঠোর হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা।’
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃঞ্চ পদ রায় বলেন, ‘জনসাধারণকে সরকারি নির্দেশনা মানাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় পুলিশ মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি সচেতন করছে। জনগণ নিজের জায়গা থেকে সচেতন না হলে তা টেকসই হয় না। সেই কাজটাই করছে পুলিশ।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে