Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতা দিবসে নাশকতা: মামুনুলসহ ১৭ হেফাজত নেতার বিরুদ্ধে মামলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৫১ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২১ ০০:৪৩

ঢাকা: দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় নাশকতার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের ১৭ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় সাধারণ মুসল্লিদের ওপর হামলার পাশাপাশি দেশব্যাপী নৈরাজ্য তৈরির পরিকল্পনার অভিযোগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়েছে মামুনুলসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন ওয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী খন্দকার আরিফ-উজ-জানান। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক সারাবাংলাকে এ মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব, লোকমান হাকিম ও নাসির উদ্দিন মনির; নায়েবে আমির বাহাউদ্দিন জাকারিয়া; অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, প্রচার সম্পাদক যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, ছাত্র ও যুব সম্পদিক হাফেজ মো. জোবায়ের, দফতর সম্পাদক হাফেজ মো. তৈয়ব ও সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক মুশতাকুন্নবী; মাখজান, ঢাকার নুরুল ইসলাম জেহাদী; ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার নায়েবের আমির মাজেদুর রহমান; লালবাগ, ঢাকার হাবিবুর রহমান, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী ও জসিম উদ্দিন; টঙ্গী শাখার সহসাংগঠনিক সম্পদক মাসুদুল করিম; এবং মোহাম্মদপুর, ঢাকার ফয়সাল আহমেদ।

পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, নাশকতা ও দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনাসহ সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলাটিতে। মামলায় যে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের সবাই হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। মামলাটি পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার এজাহারে বাদী আরিফ-উজ-জামান বলেন, তিনি ওয়ারী র‌্যাংকিন স্ট্রিটের বাসিন্দা। গত ২৬ মার্চ তিনি বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। ফরজ নামাজ শেষে তিনি মসজিদের ভেতরে কিছু উশৃঙ্খল ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের জুতা প্রদর্শনসহ নানা ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে দেখেন। ওই অবস্থায় দুপুর দেড়টার দিকে জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হলে তিনি উত্তর গেটের সিঁড়িতে কয়েক হাজার জামাত-শিবির-বিএনপি-হেফাজতের উগ্র মৌলবাদী ব্যক্তিদের উশৃঙ্খল জমায়েত দেখতে পান।

বিজ্ঞাপন

এজাহারে বাদী লিখেছেন, ‘উল্লেখ্য যে, বতারে স্লোগান ও তাদের নিজেদের কথোপকথন থেকে জানিতে পারি যে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় জামাত-শিবির-বিএনপি-হেফাজত নেতৃবৃন্দ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হইয়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেশি-বিদেশি সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিকে বানচাল করার ও ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। উক্ত জমায়েত হিইতে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী নানা জঙ্গি স্লোগান দিতে থাকে। হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ নির্দেশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে উক্ত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের নিমিত্তে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দা, ছোরা, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, বাঁশ, গজারী লাঠি, শাবল ও রিভালবার, পাইপগানসহ অন্যান্য আগ্নেয়ান্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত আমিসহ অন্যান্য সাধারণ মুসল্লিগণের ওপর হামলা করে।’

এজাহারে অভিযোগ করে বাদী বলেন, মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ হুকুমে হেফাজত নেতা মওলানা জুনায়েদ আল হাবিব তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মাথা লক্ষ্য করে বাড়ি দেন। এ সময় প্রাণরক্ষায় বাদী সরে গেলে আল হাবিব তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বড় রড দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এসময় তিনি মাটিতে পড়ে গেলে অন্য হেফাজত নেতারা বাঁশের লাঠি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। মামলার একজন সাক্ষীকেও ধারালো কিরিচ দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথার পেছনে গুরুতর জখম করেন।

এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দুইটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া বায়তুল মোকাররমের আশপাশের দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়।

এজাহারে বলা হয়, ১ নম্বর আসামি মামুনুল হকসহ অন্য আসামি ও অজ্ঞাতনামা জামায়াত-শিবির-বিএনপি, জঙ্গি মৌলবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী গুজব ছগিয়ে সরকার পতনের লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনা করে। এর ফলে মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা, ষড়যন্ত্র ও পরিচালনায় বাকি আসামিসহ হেফাজত, জামায়াত-শিবির-বিএনপির দুই থেকে তিন হাজার জঙ্গি কর্মী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বাড়িঘরে আগুন দেয়, ভাঙচুর করে, লুটতরাজ চালায়। আসামিদের এ ধরনের কার্যক্রম ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে ও ভীতি সঞ্চার করে।

আসামিদের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করে সংবিধান লঙ্ঘন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, মসজিদ ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল, অকর্যকর, মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার মাধ্যমে অবৈধ পথে সরকার উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আনেন বাদী খন্দকার আরিফ-উজ-জানান।

সারাবাংলা/এনআর/ইউজে/টিআর

টপ নিউজ পল্টন থানায় মামলা বায়তুল মোকাররম মামুনুল হক স্বাধীনতা দিবসে নাশকতা