Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার বিধিনিষেধ সত্ত্বেও চলছে মেলা, খাজনার নামে চাঁদাবাজি

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২১ ২২:৪৮

সিরাজগঞ্জ: সারাদেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। কিন্তু সরকারের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জ সদর থানার বাগবাটিতে জমজমাট আসবাবপত্রের মেলা চলেছে। তিন দিনের মেলা হলেও তা শেষ হয়নি ১৫দিনেও। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। শুধু তাই নয়, মেলায় খাজনার নামে চলছে রীতিমতো চাঁদাবাজি।

এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীরা ইজারাদারের নিকট জিম্মি হয়ে না পাড়ছেন। ইজারাদারের চাওয়া অন্যায্য খাজনার না পারছেন প্রতিবাদ করতে, না পারছেন মেলা ছেড়ে যেতে। আর এসব যেন দেখেও দেখছে না স্থানীয় প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে বাগবাটি মেলায় ঘুরে ও স্থানীয় এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগবাটি মেলাটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছরেই চৈত্র মাসের নির্দিষ্ট সময়ে মেলাটি হাটখোলা প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য বারের মতো এবারেও ২২মার্চ মেলাটি শুরু হয়। মূলত তিন দিনের জন্য মেলার আয়োজন হয়ে থাকলেও ১৫ দিনেও শেষ হয়নি মেলাটি। এবারের মেলায় সর্বমোট ৭১টি আসবাবপত্রের দোকান অংশ নিয়েছে। আর এটাকেই পুঁজি করে খাজনার নামে ইচ্ছে মতো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইজারাদার। যার বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে না কোনো রশিদ। কোন সামগ্রীর বিপরীতে কত টাকা নিতে বা দিতে হবে সেটা জানেন না স্বয়ং ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরাও। মেলার খাজনা বিক্রির ওপরে নয়, তা নির্ভর করছে ব্যবসায়ীদের আসবাবপত্রের ওপর। স্বাভাবিকভাবে বিক্রিত সংখ্যার ওপরে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা দেওয়ার কথা থাকলেও দোকানে কয়টি আসবাব আছে তার ওপরেই ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করা হচ্ছে খাজনা। আর সেই অনুযায়ী হচ্ছে আদায়ও। যা সম্পুর্ণ নিয়ম বহির্ভূত ও অন্যায্য বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাবসায়ী বলেন, আমি ইতিমধ্যেই ২২ হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি। কিন্তু এর বিপরীত কোনো রশিদ বা কিসের জন্য এত টাকা তার উত্তর পর্যন্ত পাইনি। মেলায় কিছু ক্যাডার বাহিনী ঘোরাফেরা করে। তাই এর প্রতিবাদ করার মতো সাহসও নাই।

একই অভিযোগ করেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। একজন বলেন, আমি মেলায় এখন পর্যন্ত ১৬ থেকে ১৭টি খাট বিক্রি করেছি। এর বিনিময়ে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি, জানিনা আরও কত দিতে হবে। আরেকজন একই ভাষায় বলেন, ১৮ হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি তবে শুনলাম আরও দিতে হবে। তবে এটাকে রীতিমতো খাজনার নামে চাঁদাবাজি বলেই উল্লেখ করছেন সবাই।

কিন্তু করোনায় সরকারের নিষেধাঞ্জার মধ্যে মেলায় দোকান খুলে রাখার বিষয়ে সবাই বলেন, যেহেতু অনেক টাকা খাজনা দিতে হচ্ছে তাই এমতাবস্থায় চলে গেলে মূলধনটাও থাকবে না।

বাগবাটি হাট কর্তৃপক্ষের সভাপতি মো. সজলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এটা মেলার আসবাবপত্রের ইজারাদার বলতে পারবেন। আমরা তিন দিনের জন্য সাইফুল ইসলামকে মেলার ইজারা দিয়েছি। তিনিই এই বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। তবে এরকমটা হলে সেটা অন্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই সেই অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিব।

মেলার ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা খাজনার টাকার জন্য কাউকে চাপ দিচ্ছি না। তবে প্রতিবেদকের কাছে প্রমাণ আছে এবং খাজনা কেন নির্ধারণ করা হয়নি, কেন টাকার রশিদ দেওয়া হচ্ছে না ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কেন করোনার মধ্যেও মেলা চালানো হচ্ছে এর একটি প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বরং অনেক রাজনীতিবীদদেরও নাম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেন।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী বলেন, বিষয়টি জানতাম না। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন করোনা রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে এমনটা হয়ে থাকলে এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সারাবাংলা/আরএ/এনএস

আসবাবপত্রের মেলা করোনার বিধিনিষেধ চাঁদাবাজি টপ নিউজ সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

জীবন থামে সড়কে — এ দায় কার?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২

বাসচাপায় ২ কলেজছাত্র নিহত
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর